মোঃ রশিদুল ইসলাম রিপন, লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধিঃ ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মরণপণ লড়াই আর মুক্তিকামী মানুষের দুর্বার প্রতিরোধে পাকহানাদার বাহিনীর হাত থেকে মুক্ত হয় এই জেলা। ত্রিমুখী আক্রমণ চালিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাটকে শত্রু মুক্ত করেছিলো। বাংলার বীর সেনানী মুক্তিযোদ্ধারা এই দিনে সুর্যোদয়ের সাথে সাথে জয়বাংলা শ্লোগান দিয়ে বিজয়ের পতাকা উড়িয়ে ছিলেন।
অবিস্বরণীয় এই দিনটি যথাযথভাবে উদযাপনের জন্য লালমনিরহাটের বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক, মুক্তিযোদ্ধা সংগঠন, সাংবাদিকবৃন্দ ও জেলা প্রশাসন বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিয়ে থাকে।
বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা গেছে, ৬ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধারা তিন দিক থেকে আক্রমণ চালিয়ে লালমনিরহাট শহরের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। তাদের ত্রিমুখী আক্রমণে টিকতে না পেরে খান সেনারা পিছু হটতে থাকে। এক পর্যায়ে চূড়ান্ত বিজয়ের পূর্ব মুহূর্তে মুক্তিযোদ্ধারা লালমনিরহাট ঘিরে ফেলেন। অবস্থা বেগতিক দেখে ওই দিন ভোর ৬টায় লালমনিরহাট রেলওয়ে স্টেশন থেকে পাকসেনা, রাজাকার আলবদর ও তাদের দোসর অবাঙ্গালিরা দুটি স্পেশাল ট্রেনে করে রংপুর ক্যান্টমেন্টে পালিয়ে যায়। লালমনিরহাট শত্রু মুক্ত হওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে চারিদিক থেকে লোকজন ছুটে আসতে থাকে শহরের দিকে। সন্ধ্যার মধ্যে শহরের প্রাণকেন্দ্র মিশন মোড় এলাকায় লোকজন পূর্ণ হয়ে যায় আর মূক্তির উল্লাস করতে থাকে। শ্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে শহর ও আশ-পাশের গ্রাম। আনন্দে উদ্বেলিত কন্ঠে স্বদেশের পতাকা নিয়ে ছুটোছুটি করতে থাকে তরুণ, যুবক, আবাল বৃদ্ধ বনিতা সকলই। লালমনিরহাটে এই দিনে সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ে মূক্তির উল্লাস। মুক্তিযোদ্ধারা বিজয় মিছিল নিয়ে লালমনিরহাট সদর থানায় এসে সমবেত হয়। আর স্বাধীন বাংলাদেশের পতাকা উড়িয়ে লালমনিরহাটকে শত্রু মুক্ত ঘোষণা করে।
পরদিন ৭ ডিসেম্বর বাঁধ ভাঙা জোয়ারের মতো 'জয় বাংলা' ধ্বনিতে বিজয়ের পতাকা নিয়ে শহরে ঢুকে পড়ে মুক্তিকামীরা। যারা ১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের কালো রাতে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিল।
লামনিরহাটের একমাত্র বীরপ্রতীক ক্যাপ্টেন (অব.) আজিজুল হক বলেন, স্বাধীনতার এতো বছর অতিবাহিত হলেও অনেক মুক্তিযোদ্ধা অনাহারে-অর্ধাহারে দিন পার করছে। এ জন্য মহান মুক্ত দিবসের এ দিনে সহায়-সম্বলহীন মুক্তিযোদ্ধাদের পুনর্বাসন করতে সরকারের প্রতি আহবান জানাই।
এ বিষয়ে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক আবু জাফর জানান, প্রতিবারের ন্যায় এবারেও যথাযথ মর্যাদায় দিবসটি পালন করা হবে।
প্রসঙ্গত: মুক্তিযুদ্ধের সময় গোটা বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৬ নং সেক্টরটি শুধূ বাংলাদেশের মাটিতে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আর সেটি অবস্থিত লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারীতে। এ সেক্টরের কমান্ডার ছিলেন, বিমান বাহিনীর এম খাদেমুল বাশার। বাকী ১০টি সেক্টর ছিল ভারতের বিভিন্ন এলাকায়।