যশোর করোনার আবহে ঈদের শপিং, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

যশোর করোনার আবহে ঈদের শপিং, মানছে না স্বাস্থ্যবিধি

সুমন হোসেন, যশোর জেলা প্রতিনিধি: বৈশ্বিক মহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ সুনামির মতো ছড়িয়ে পড়েছে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতসহ বাংলাদেশেও। সংখ্যাগত দিক ও স্বাস্থ্য পরিসেবা  বিবেচনায় মনে হতে পারে ভারতে করোনার অবস্থা খুবই খারাপ। কারণ সেখানে হাসপাতালে সিট নেই, পর্যাপ্ত অক্সিজেনের যোগান নেই,আইসিইউ নেই। এমনি শ্মশানে লাশ পোড়ানোর ব্যবস্থা নেই,লাশ দাফনের কবরখানানেই। শুধু নেই নেই নেই আর নেই।দিল্লি,মধ্যপ্রদেশসহ কয়েকটি প্রদেশে বাতাসে লাশের গন্ধে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম।

ভারতের এই মানবিক বিপর্যের জন্য স্বাস্থ্যবিধি না মানা ও ধর্মের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস এবং কুসংস্কারই সর্বাগ্রে দায়ী।এছাড়া ভারতে আক্রমণের এই দ্বিতীয় টেউয়ের মধ্যে কয়েকটি প্রদেশে নির্বাচনী জনসমাবেশ করা ও লকডাউন বাস্তবায়নে ব্যবস্থা না নেওয়াও কম দায়ী নয় যার খেসারত ভারতবাসীকে  দিতে হচ্ছে। 
আমাদের দেশে যখন করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হলো তখন সরকারিভাবে বিধিনিষেধ জারী করা, সীমিত পরিসরে লকডাউন, পরবর্তীতে কঠোর লকডাউন জারী করা, গণপরিবহন চালুর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতাসহ জনসমাগম নিয়ন্ত্রণ,অফিস আদালত, শিল্পকারখানা চালানোর ক্ষেত্রে বাধ্যবাধকতা জারির জন্য  দ্বিতীয় ঢেউয়ের তীব্রতা কিছুটা নিয়ন্ত্রণে চলে আসছে।

কিন্তু কিছুদিন পর শুরু হবে বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব পবিত্র  ইদুল ফিতর। আর এই উৎসবকে কেন্দ্রে দোকানপাট ও শপিংমলগুলো খুলে দেওয়ার জন্য ব্যবসায়ীরা সরকারের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের সাথে মিটিং করেন। মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় সকাল ১০ টা থেকে রাত ৮ টা পর্যন্ত দোকানপাট খোলা রাখতে পারবেন। কিন্তু দোকানের ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে হবে। আর ব্যবসায়ীরা যদি স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত না করেন তাহলে দোকানপাট শপিংমল সব বন্ধ করে দেওয়া হবে বলে জানান।
এছাড়াও আবার সিদ্ধান্ত হয়েছে  লকডাউন বৃদ্ধি করে ১৬ মে পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে এবং সরকার বেসরকারি সকল প্রতিষ্ঠান ইদের ছুটি ৩ দিনের বেশি দিতে পারবে না।আন্তঃনগর পরিবহনগুলো জেলার মধ্যে চললেও দূরপাল্লার কোন ট্রেন বা বাস চলবে না।

করোনার দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলার জন্য সরকারের গৃহীত  জনকল্যাণমুখী পদক্ষেপগুলি সত্যি বিফলে যাবে যদি ইদের মার্কেটের কেনাবেচার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যবিধি মেনে, সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ও মাস্ক ব্যবহার করে বাজারে না যাওয়া হয়।
কিন্তু মার্কেটগুলো ঘুরে দেখলে যে  চিত্র ফুটে ওঠে তা সত্যি কষ্টদায়ক। আমরা যে খুশির জন্য কেনাকাটা করতে যাচ্ছি সেই খুশি বা আনন্দের পরিবর্তে অদৃশ্য  করোনা ডেকে আনছি না তো? আর যদি সত্যি করোনা বয়ে আনি এবং করোনার কারণে পরিবারের কারো যদি জীবন বিলিয়ে দিতে হয় তাহলে সারাজীবনের ইদ আনন্দ নিরানন্দেই কাটবে অতীতের স্মৃতি স্মরণ করে।তাই আসুন আমরা নিজেরাই সচেতন হই।করোনার বিরুদ্ধে সরকার ঘোষিত দফাগুলি মেনে চলি, নিজে ভাল থাকি অন্যকে ভাল থাকতে সহযোগিতা করি। কিন্তু  বাস্তবতা বড়ই কঠিন ও নির্মম।যদি পরিবারের কেউ মারা যায় তাহলে তা দেশের জন্য সংখ্যা হলে একটি পরিবারের জন্য সারাজীবনের কান্না হয়ে থেকে যাবে।

 আজ যশোরের কয়েকটি মার্কেট ঘুরে দেখা যায় কোথাও কোন স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই,সামাজিক দূরত্ব নেই,হ্যান্ডসেনিটাজারের ব্যবস্থা নেই। আবার হ্যান্ডসেনিটাইজারের ব্যবস্থা থাকলেও ব্যবহার নেই। তেমন কারো মুখে মাস্ক মুখে নেই। এসব দেখে প্রশাসনও বার বার মিটিং করে বাস্তবায়নের জন্য নানামুখী পদক্ষেপ নিতে হচ্ছে। যেন সকল দায় সরকারের জনগণের কোন দায়িত্ব ও কর্তব্য নেই।

 গত ৩রা মে মন্ত্রীসভার বৈঠকে নতুন করে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় মাস্ক না পরলে কঠোর অ্যাকশান নেওয়া হবে। পুলিশ, ম্যাজিস্ট্রেট ও সিটি করপোরেশন মার্কেট তদারক করবেন। সেখানে মাস্ক ছাড়া ঘুরলে প্রয়োজনে মার্কেট বন্ধ করে দেওয়া হবে। যশোর জেলাসহ সমগ্র দেশের জেলা,উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বাজার মনিটরিংসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করে যখন শাস্তি মূলক ব্যবস্থা নিতে তা আমাদের কাছে হয়তো মনে হবে সত্যি একটু বেশী বাড়াবাড়ি হয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এই বাড়াবাড়ি না করলে ভারতের মতো আমাদেরও হয়তো অনেক কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন হতে হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ