মোল্যা আব্দুস সাত্তার, কেশবপুর (যশোর) কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা নিরসনে ৩ নদী ও ১০ সংযোগ খাল পুনঃখননে পাউবো প্রায় ১৪০ কোটি টাকার প্রকল্প গ্রহণ করেছে। চলতিমাসেইসেনাবাহিনীরতত্বাবধানে ৩ নদীর ৮২ কিলোমিটার ও পাউবো'র তত্বাবধানে ১০ খালের ৩১ কিলোমিটার খনন শুরু হবে। ফলে জনগণের দীর্ঘদিনের নদী অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন ও পোল্ডারে আবদ্ধ নদ-নদী উন্মুক্তের দাবি অপূর্ণই রয়ে গেল।
জানা গেছে, কেশবপুর ও মনিরামপুর উপজেলার বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরি নদী দিয়ে সাগরে পতিত হয়। এছাড়া, কেশবপুরের আপারভদ্রা, হরিহর ও বুড়িভদ্রা নদীর বর্ষার অতিরিক্ত পানি হরি নদীতে নিষ্কাশন হয়। এসব নদীর সংযোগ খালে পাউবোর ৯১টি স্লুইচ গেট ও অসংখ্য পোল্ডার রয়েছে। এসব পোল্ডারের দুপাশ পলিতে ভরাট হয়ে পানি নিষ্কাশন বন্ধ রয়েছে। এরফলে প্লাবনভূমির সঙ্গে নদীর সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে বর্তমানে হরি, আপারভদ্রা ও হরিহর নদীতে জোয়ার-ভাটা উঠে না। নদীগুলো বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হয়ে বন্যায় রূপ নিচ্ছে। পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা না থাকায় এখনও বাগডাঙ্গা মনোহরনগর গ্রাম তলিয়ে রয়েছে।
পাউবো সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছর হরি নদীর খর্নিয়া ব্রিজ থেকে ভবদহের ২১ ভেন্ট স্লুইচ গেট পর্যন্ত ২০ কিলোমিটার, হরি নদীর শাখা আপারভদ্রার কাশিমপুর থেকে মঙ্গলকোট ব্রিজ পর্যন্ত ১৮.৫০ কিলোমিটার, বড়েঙ্গার তিন নদীর মোহনার জিরো পয়েন্ট থেকে কেশবপুর ও মনিরামপুর হয়ে রাজগঞ্জ রোর্ড পর্যন্ত হরিহর নদীর ৩৫ কিলোমিটার সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে এবং ১০টি সংযোগ খালের মধ্যে নুরানিয়ার-৬.৫ কিলোমিটার, বাদুড়িয়ার-৩ কিলোমিটার, শাখা নদী বুড়িভদ্রার-৫ কিলোমিটার, গরালিয়ার-১.৩৫০ কিলোমিটার, কন্দর্পপুরের-১ কিলোমিটার, কাশিমপুরের-১ কিলোমিটার, ভায়নার-১.৫০ কিলোমিটার, বিল খুকশিয়ার-৭.৫০ কিলোমিটার, বুড়–লির-৩ কিলোমিটার ও পাথরার-১.৫০ কিলোমিটার খাল পাউবো'র অধীনে পুনঃখনন করা হবে। ইতোমধ্যে, পাউবো'র পক্ষে নদীর সীমানা নির্ধারণ করাসহ সেনাবাহিনী নদীগুলো পরিদর্শন করেছে। এসব নদী-খাল খননে ১৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। চলতি মাসেই খনন কাজ শুরু হবে।
তিন নদী মোহনার বাসিন্দা কন্দুপুর গ্রামের আব্দুল মান্নন বলেন প্রতি শুষ্ক মৌসুমের ১৫ মাঘ থেকে নদীতে পলি আসা শুরু হয়। এজন্যে ১৫ মাঘের আগেই আপারভদ্রার কাশিমপুরে সাময়িক ক্রসবাঁধ দেয়ার দাবি জানানো হয়। কিন্তু পাউবোর বিলম্বে বাঁধ দেয়ার কারণে পলিতে নদী ভরাট হয়ে যায়। বিল কপালিয়ায় টিআরএম ছাড়াই ২০১৯ সালে পাউবো ভবদহ প্রকল্পের আওতায় ৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩ নদী ও ১০ সংযোগ খাল খনন করেছিল। কিন্তু দু'বছর যেতে না যেতেই নদী-খাল আবারও পলিতে ভরাট হয়ে পর পর ৩ বছর ভয়াবহ বন্যা ও স্থায়ী জলাবদ্ধতা দেখা দেয়।
হরি-ঘ্যাঁংরাইল অববাহিকার জলাবদ্ধতা নিরসন কমিটির সভাপতি ও সাবেক বাপাউবোর সদস্য মহিরউদ্দিন বিশ্বাস বলেন, ১৯৮৪ সালের পর থেকে পাউবো নদী-খাল খননে ডজন খানেক নানাবিধ প্রকল্প বাস্তবায়ন করে। এরমধ্যে একমাত্র টিআরএম ছাড়া, আর কোন প্রকল্পই নদীর নাব্যতা সৃষ্টি বা ধরে রাখতে পারেনি। পানি উন্নয়ন বোর্ড কেশবপুরের উপবিভাগীয় প্রকৌশলী সুমন সিকদার বলেন, বন্যা ওজলাবদ্ধতা নিরসনে ৩ নদী ও ১০ খাল পুনঃখননে সরকার ১৩৯ কোটি ৯৩ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। এরমধ্যে ৩টি নদীর পুনঃখনন সেনাবাহিনীর তত্বাবধানে হবে। ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী নদী এলাকা পরিদর্শন করেছেন। নদী-খাল খনন সম্পন্ন হলে এলাকা বন্যা ও জলাবদ্ধতা মুক্ত হবে।