তাকবীরে তাশরীক কি




এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ
ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি। 
'
                                         বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম।

তাকবীরে তাশরীক হলোঃ
الله اكبر الله اكبر. لااله الا الله والله اكبر الله اكبر ولله الحمد.
.
              "তাকবীরে তাশরীকের ইতিহাস"
তাকবীরে তাশরীক কোন ঘটনা থেকে শুরু হয়েছে, তা একমাত্র আল্লাহ তায়ালাই ভালো জানেন৷ তবে যতদুর জানা যায় তা হলোঃ হযরত ইবরাহীম (আঃ) যখন তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আঃ) কে কুরবানী করার জন্য মাটিতে শুয়ায়ে তার গলায় ছুড়ি চালাচ্ছিলেন, ঠিক এমনই মূহুর্তে আল্লাহ তায়ালা হযরত জিবরাইল (আঃ) কে নির্দেশ দিলেন,একটি জান্নাতী দুম্বা নিয়ে দ্রুত হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর  কাছে পোঁছার জন্য৷ তখন হযরত জিবরাইল (আঃ) খুবদ্রুত আসছিলেন৷ কিন্তু দূর থেকেই দেখতে পেলেন হযরত ইবরাহীম (আঃ) তার পুত্রের গলায় ছুরি চালাচ্ছেন৷ তখন জিবরাইল আঃ আশংকা করলেন যে,তিনি পৌঁছার পূর্বেই বুঝি ইসমাইল আঃ জবাই হয়ে যাবেন৷ তাই তিনি ঘাবড়ে গিয়ে উচ্চস্বরে বলে উঠলেনঃ 
الله اكبر الله اكبر  
 
হযরত জিবরাইল (আঃ) এর তাকরীর পাঠ শুনে হযরত ইবরাহীম (আঃ) বলে উঠলেনঃ
لااله الا والله اكبر.
আর হযরত ইবরাহীম (আঃ) এর তাকবীর শুনে এবং দুম্বা জবাই হতে দেখে হযরত ইসমাঈল (আঃ) বলে উঠলেনঃ
 الله اكبر ولله الحمد
এভাবে তিনজনের যিকিরকে একত্রিত করে হয়েছে তাকবীরে তাশরিক৷
(কুরবানীর ইতিহাস ২২)
.
"তাকবীরে তাশরীকের বিধান"
※ যিলহজ্জ মাসের ৯-তারিখ ফজর  থেকে ১৩-তারিখ আসর পর্যন ৫-দিনে মোট ২৩-ওয়াক্ত ফরয নামাযের পর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ অর্থাৎ প্রত্যেক বালিগ পুরুষ-মহিলা, মুকীম-মুসাফির, গ্রামবাসী-শহরবাসী, জামাতে নামায আদায়কারী-একাকী নামায আদায়কারী  প্রত্যেকের উপর একবার করে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ আর ওয়াজিব তরক করা গোনাহে কবীরা৷ তাই আইয়্যামে তাশরীকের দিনসমূহে প্রতি ফরয নামাযের পর ইচ্ছাকৃতভাবে তাকবীরে তাশরীক পাঠ না করা কবীরা গুনাহ৷ (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১৮৬)
※ তাকবীরে তাশরীক একবার করে পাঠ করা ওয়াজিব৷ একাধিকবার পাঠ করা খেলাফে সুন্নাত তথা বিদআত৷ (আলমগীরী ১/১৮৬)
※ পুরুষদের জন্য উচ্চস্বরে এবং মহিলাদের জন্য নিম্নস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ সুতরাং কোন পুরুষ যদি নিম্নস্বরে এবং মহিলা উচ্চস্বরে তাকবীরে তাশরীক পাঠ করে,তবে তা আদায় হবেনা৷ 
(তাহতাবী ২৯৫)
※ ফরয নামাযের সালাম ফিরানোর সাথে সাথেই তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ যদি এ সময় তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে যায়,তবে যতক্ষন সে মসজিদে থাকবে ও নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ না করবে,
ততক্ষন পর্যন্ত তার উপর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব৷ আর যদি নামায ভঙ্গ হয় এমন কোন কাজ করে ফেলে,তবে তার উপর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব নয়৷ 
কিন্তু এ অবস্থায় ভুলে যাওয়ার কারনে ওয়াজিব তরক করার কোন গোনাহ হবেনা এবং তার উপর কোন জিম্মাদারীও থাকবে না৷কেননা,
তাকবীরে তাশরীকের কোন কাযা নেই৷ (তাহতাবী ২৯৫)
※ ইমাম তাকবীরে তাশরীক পাঠ করতে ভুলে গেলেও মুক্তাদীর তাকবীর বলা ওয়াজিব। ইমাম আবু ইউসুফ রহঃ বলেন,আমি আইয়্যামে তাশরীকের মধ্যে একবার নামাযের ইমামতি করছিলাম৷ সালাম ফিরানোর পর তাকবীরে তাশরীক বলতে আমার খেয়াল ছিলনা৷ তখন আমার মুহতারাম উস্তাদ হযরত ইমাম আজম আবু হানিফা রহঃ উচ্চস্বরে তাকবীর বললেন৷ তাঁর তাকবীর শুনে আমরা সবাই তাকবীর পাঠ করলাম৷ 
(তাহতাবী ২৯০)
※ মাসবুকের জন্যও তার নামায আদায় করে তাকবীর বলা ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে শামী ১/৭৮৬)
※ একাকী নামায আদায়কালে যদি ফরয নামাযের পর তাকবীর বলতে ভুলে যায়। এবং এমন কিছু কাজ করে ফেলে, যার দ্বারা নামায নষ্ট হয়ে যায় যেমন, নামাযের স্থান থেকে উঠে যাওয়া,অথবা ভূলে বা ইচ্ছায় কথা বলা অথবা ইচ্ছা করে অজু ভঙ্গ করা ইত্যাদি, তবে তার উপর থেকে তাকবীর বলা রহিত হয়ে যাবে। (ফতোয়ায়ে শামী ১/৭৮৬)
※ যিলহজ্জ মাসের উল্লেখিত পাঁচ দিনের ছুটে যাওয়া ফরয নামায উক্ত পাঁচ দিনের মধ্যেই কাযা আদায় করলে, 
কাযা নামায আদায়ের পর তাকবীরে তাশরীকও পাঠ করাও ওয়াজিব।
(ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১৮৭)
※ তাকবীরে তাশরীক শুধু ফরয নামাযের পর পাঠ করা ওয়াজিব৷ 
তাছাড়া,ঈদের নামায,বিতর নামায, জানাযার নামায ইত্যাদি নামাযের পর তাকবীরে তাশরীক পাঠ করা ওয়াজিব নয়৷ (ফতোয়ায়ে আলমগীরী ১/১৮৬)।

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ