পটিয়ায় রহিম-সান্টুর নেতৃত্বে চলছে মাটি কাটার মহোৎসব

সেলিম চৌধুরী স্টাফ রিপোর্টারঃ মহামারী করোনা রোধে সারাদেশে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক দুই সপ্তাহ লকডাউনের সুযোগে পটিয়া উপজেলায় আবারো চলছে দিন ও রাতের আঁধারে চাষাবাদের কৃষিজমি ও পাহাড় থেকে মাটি কাটার মহোৎসব। স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রশাসনকে ম্যানেজ করে পটিয়ার কচুয়াই-খরনা লালারখীলের সিন্ডিকেট প্রধান আবুদর রহিম (সও.) ও সান্টুর নেতৃত্বে ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট রাত-দিন এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটছে। এতে তারা মাটির ব্যবসা করে রাতারাতি কোটিপতি বনে গেছেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, রাতে ডিউটিরত থানা পুলিশকে ম্যানেজ করে নিবির্চারে পটিয়ার পূর্ব পাহাড় লালারখীল খরনা, কচুয়াই, উত্তর শ্রীমাই, মুরাদাবাদ, লড শ্রীমাই, পটিয়ার কাঞ্চনগর চাবাগান এলাকায় কৃষিজমি ও পাহাড় কাটা জমজমাটভাবে চালিয়ে এলেও রহস্যজনক কারণে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা নীরব ভূমিকা পালন করছেন। এতে স্থানীয়দের মাঝে চরম ক্ষোভ সৃষ্টি হয়েছে।
সূত্রে জানা যায়, মাটিকাটা চক্রটি প্রতিদিন পাহাড় ও ফসলি জমি থেকে টপসয়েল (জমির উপরিভাগের উর্বর অংশ) কেটে নিচ্ছে। এ মাটি কাটার ফলে পাহাড়ি বনভূমি যেমন ধ্বংস হচ্ছে, তেমনি কৃষিজমির পরিমাণ দিন দিন কমে যাচ্ছে। তাছাড়া ইটভাটা, বসতভিটা ও পুকুর ভরাটকাজে ব্যবহৃত হচ্ছে এসব মাটি। প্রধানমন্ত্রী ও ভূমি আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুগলি দেখিয়ে এক শ্রেণির দালাল ফসলি জমির টপসয়েল কেটে উজাড় করছে। ফলে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের পাশাপাশি কৃষি উৎপাদন ও ফসলের জৈববৈচিত্র্য মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হয়ে পড়েছে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের বিষয়ে সরকার নিরলস কাজ করে গেলেও ভূমিখেকোদের ভয়াল থাবায় পরিবেশে বিপর্যয় নেমে এসেছে।
এ সংক্রান্ত বিষয়ে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী প্রশাসনকে কঠোর নির্দেশনা দিলেও তা উপেক্ষা করে ধানি জমি থেকে টপসয়েল কাটার কাজ অব্যাহত রয়েছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, পুলিশ মাঝেমধ্যে লোক দেখানো অভিযান চালালেও কার্যকর কোনো কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলার কচুয়াই ও খরনা পাহাড়ি এলাকা, লালরখীল, শহীদ শাহ আলম স্কুলের পাশ থেকে আব্দুর রহিম (সও.), মো. সান্টু কাঞ্চনগর চাবাগান (পটিয়া অংশ) থেকে, মো. জামাল, আবদুর রউপ, মো. রহিম, দেলোয়ার, ইমরান, মো. মোজাম্মেলসহ ৫০ জনের একটি সিন্ডিকেট রাত-দিন এস্কেভেটর দিয়ে মাটি কাটছে। এছাড়াও হাইদগাঁও সাতগাউছিয়া মাজারের পূর্বে, হাইদগাঁও জিয়ারপাড়া, হাইদগাঁও দীঘিরপাড় কালীবাড়ী এলাকা, গুচ্ছগ্রাম, কেলিশহর মডেল টাউন, খিল্লাপাড়া, ছত্তারপেটুয়া, নাগাটা বিল, মা ফাতেমা মাজারের পাশে, রতনপুর বড়ুয়ার টেকের গোয়ালপাড়া, মৌলভীহাট হয়রত আবদুল কাদের জিলানী (রা.) মাজারের পাশে, বরলিয়া, ধলঘাট প্রবাহ স্টোরসহ ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায় প্রতিটি পয়ন্টে ২০-৩০ শ্রমিক ‌বেং এস্কেভেটর দিয়ে কৃষিজমি থেকে মাটি কেটে ট্রাক, ড্রাম, মিনি পিকআপ ও ট্রলিভর্তি করে উজাড় করছে এ অসাধু মাটি ব্যবসায়ীরা। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই মাটি কাটার গভীরতার পরিমাণ ১০ থেকে ১৫ ফুট পর্যন্ত ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ফলে কোথাও কোথাও অর্থনৈতিক ও অনৈতিক আগ্রাসনে পার্শ্ববর্তী মালিকের জমিও নষ্ট হচ্ছে।এ বিষয়ে পটিয়া উপজেলা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, মাটি কাটার বিষয়ে শুনেছি। যে বা যারা এই মাটি কাটার সাথে সম্পৃক্ত তাদের আইনের আওতায় হবে।
পটিয়া থানার ওসি রেজাউল করিম মজুমদার জানান, যেখানে মাটি কাটার খবর পাচ্ছি সেখান থেকে গাড়ি আটক করছি। তবে কোথায় মাটি কাটছে জানা নেই। সঠিক তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। বর্তমানে লকডাউনের সুযোগের সেই সিন্ডিকেট ফসলি জমি ও পাহাড় থেকে টপ সয়েল কেটে উজাড় করছে।

সেলিম চৌধুরী 
পটিয়া প্রতিনিধি 
পটিয়া চট্টগ্রাম 
০১৮১৯৩৪৯৪৪২

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ