করোনায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে, ৫ লাখ তাঁত শ্রমিক অনাহারে অর্ধাহারে

                      নীরব নিথর তাঁত কারখানা

মাসুদ রানা সিরাজগঞ্জ জেলাপ্রতিনিধঃ
করোনায় সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে ।তাঁত শিল্পে ব্যবহৃত রং সুতার দাম বৃদ্ধি ও করোনা মহামারী ও চলমান লকডাউনের সরকারী  বিধি নিষেধে  সিরাজগঞ্জের তাঁত শিল্প ধ্বংসের উপক্রম হয়ে পড়েছে। ফলে বেকার হয়ে পড়া প্রায় ৫ লাখ তাঁত শ্রমিক অনাহারে অর্ধাহারে দিন কাটাচ্ছেন । ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে  পালিয়ে বেড়াচ্ছেন অনেক তাঁত মালিকেরা।  প্রতিবছর ঈদকে সামনে রেখে ভোরের সুর্যের আলো উকি দেবার  আগেই তাঁতের খট্ খট্ শব্দে জেগে উঠতো  সিরাজগঞ্জের তাঁত পল্লী। শোনা যেত তাঁত বুননের মাকুর আকুর টাকুর শব্দ। হাতে বোনা তাঁতের সাথে পাল্ল¬া দিয়ে চলতো বিদ্যুত চালিত পাওয়ার লুমও। মাঝে মাঝেই শোনা যেত তাঁতীদের উচ্চ কণ্ঠে  ভাটিয়ালী গানের সুর। সেখানে এখন নীরব কন্ঠে বেজে উঠছে কষ্টের সুর, আনন্দের পরিবর্তে শুধুই নিদারুন কষ্টের নিরবতা। প্রাকৃতিক করোনা মহামারী ও চলমান লকডাউনের সরকারী  বিধি নিষেধে হাট বাজারে ক্রেতা না থাকায় তাঁতের শাড়ি লুঙ্গি গামছা নিয়ে বিপাকে পড়েছেন মালিকগন। ফলে আগের চেয়ে কাজের চাপ একেবারেই নেই বললে চলে। আবার অনেকে বাধ্য হয়ে বন্ধ করে দিচ্ছে তাঁত কারখানা। প্রতিবছর ঈদ এলেই সরগরম হয়ে উঠতো যে তাঁত পল্ল¬ী, করোনা পরিস্থিতির কারণে তার সবই যেন থমকে গেছে। করোনার প্রভাবে বন্ধ হয়ে গেছে জেলার প্রায় সব তাঁত কারখানা। আর বেকার হয়ে পড়েছেন এ শিল্পের সাথে জড়িত প্রায় ৫ লাখ তাঁত শ্রমিক। লোকসানের ভারে নুয়ে পড়েছে একেকটি তাঁত কারখানা। গত পহেলা বৈশাখ থেকে ঈদুল ফিতর পর্যন্ত ব্যবসায়ীদের লোকসান গুনতে হয়েছে প্রায় ৩শ কোটি টাকা। করোনা পরিস্থিতির কারণে তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত মালিক ও শ্রমিক সবাই এখন মহাবিপদে। এ অবস্থায় শিল্পটিকে বাঁচিয়ে রাখতে ব্যাংক ঋণের সুদ মওকুফসহ প্রণোদনা প্রদানের জন্য প্রধান মন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন তাঁত মালিকরা। জেলার সদর, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, উল্লাপাড়া,  কামারখন্দ, বেলকুচি, রায়গঞ্জ, চৌহালী, কাজিপুরে তাঁত কারখানার সংখ্যা প্রায় ১ লাখ ৩৫ হাজারেরও বেশি রয়েছে । এখানকার উৎপাদিত শাড়ি, লুঙ্গী, গামছা দেশের বিভিন্ন হাট বাজারে বিক্রি হয়। বিশেষ করে সদরের নিউ মার্কেট,উল্লাপাড়া, বেলকুচি, শাহজাদপুর, এনায়েতপুর, পাঁচলিয়া বাজারে সপ্তাহে দুই দিন বিশাল কাপড়ের হাট বসে। এসব হাটে কোটি টাকারও বেশী পরিমান রঙ,সুতা ও কাপড় বিক্রি হয়। দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে পাইকাররা আসেন এসব হাটে। এমনকি সিরাজগঞ্জের উৎপাদিত কাপড় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়। করোনার প্রভাবে তেমন কোন আমেজই নেই এবার। শুধু পহেলা বৈশাখ উপলক্ষেই জেলায় প্রায় ১শ কোটি টাকার তাঁতপণ্য উৎপাদিত হতো। সেই বৈশাখ মন্দা যাওয়ার পর ঈদুল ফিতরেও বন্ধ রাখতে হয়েছে কারখানা। আর এ কারণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তাঁত মালিকরা। করোনায় রং, সুতা ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে ইতিমধ্যে। তবে করোনা বিপর্যয় ও লকডাউনে হাট-ঘাট বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বিপণি বিতানগুলো সরকারি নির্দেশে খুলে দেয়া হলেও বেচাকেনা জমে না ওঠায় উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধিতেও বিক্রি করতে পারছেন না তাঁতীরা।করোনায় সুতা, রং ও রাসায়নিক দ্রব্যাদির মূল্যবৃদ্ধি পাওয়ায় সিরাজগঞ্জের অধিকাংশ তাঁত কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। তাঁতীদের ৬শ' টাকার কাপড় উৎপাদনে এখন খরচ হচ্ছে ১২শ' টাকা। তবে করোনা বিপর্যয় ও লকডাউনে হাট-ঘাট বন্ধ থাকার পর সম্প্রতি বিপণি বিতানগুলো সরকারি নির্দেশে খুলে দেয়া হলেও বেচাকেনা জমে না ওঠায় উৎপাদিত কাপড়ের মূল্য বৃদ্ধিতেও বিক্রি করতে পারছেন না তাঁতীরা।সিরাজগঞ্জ নিউমার্কেট হাট কমিটির সাধারন সম্পাদক মো. রেজাউল করিম জানান, ইতিপুর্বে ১শত পাউন্ড সুতার দাম ছিল ১৩ হাজার টাকা। সুতার দাম বেড়ে ওই সুতার দাম হয়েছে ১৭ হাজার টাকা।  নিউমার্কেট হাটে প্রতি ঈদে ৩০ হাজার থান লুঙ্গি বিক্রি হতো। বর্তমানে ৩ হাজার থান লুঙ্গি বিক্রি হচ্ছে না।  এমন অবস্থা চলতে থাকলে তাঁত শিল্প ধ্বংসের পথে চলে যাবে।সরকারের সঠিক নজরদারি না থাকায় রং আর সুতার বাজার মিল মালিকদের সিন্ডিকেটে আটকে আছে বলে জানালেন রং-সুতা ব্যসায়ীরা । তাঁত শিল্পের উপকরণের দাম বৃদ্ধির কারণ খতিয়ে দেখাসহ তাঁত মালিকদের সাথে বৈঠক করে সমাধানের ব্যবস্থা নেবেন বলে আশা তাঁত মালিকদের।

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ