আলমগীর হোসেন কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি,স্টাফ রিপোর্টারঃধর্ম-বর্ণসহ নানা ধরনের সংস্কার ও জাতিগত ভেদাভেদ ভুলে প্রেম-ভালোবাসার টানে বাংলাদেশে ছুটে এসেছেন অনেক ভিন্নদেশী তরুণী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের পরিচয়ের সূত্রসহ নানান মাধ্যমে ঘর ছেড়েছেন ভালোবাসার টানে। সকল ভেদাভেদ ভুলে সাত সাগর তের নদী পাড়ি দিয়ে উড়ে এসেছেন বাংলাদেশের গ্রামেগঞ্জে। তবে প্রেমের টানে বহু প্রেমিক প্রেমিকা দেশে চলে আসলেও এবারের গল্প টা একটু ভিন্ন। বিদেশী এক মা এসেছে তার বাংলাদেশি ছেলের কাছে। এক বার নয় বেশ কয়েকবার।
এবার সেই ফেইসবুক পরিচয়ে ছেলের ভালবাসার টানে সুদূর সিংগাপুর ছেড়ে কয়েক বার কুমিল্লায় এসেছে বৃদ্ধ মা (বৌদ্ধ ধর্মীয়) জিইনাবচনের আইরিন (৫৮)। এ নিয়ে এলাকায় এক চাঞ্চল্যকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি ঘটেছে কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাইড়া গ্রামের মৃত তবদিল হোসেনের ছেলে মেহেদি হাসান ( প্রিন্স) (৩৩) এর বাড়ীতে।
এই ঘটনায় বাইড়া গ্রামে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৪ জুলাই) দুপুরে ওই মহিলাকে এক নজর দেখার জন্য দুর-দুরান্ত থেকে ভিড় জমিয়েছেন অনেকেই। এ বিষয়ে মেহেদি হাসান বলেন,তখন সময় টা ছিল ২০১৪ সাল। ফেইসবুকের মাধ্যমে আমার পরিচয় হয় সিংগাপুরের আইরিন (৫৮) বৃদ্ধা এই মহিলার।২০১৪ সাল থেকে আজও আমাদের মা-ছেলের ভালোবাসা অব্যাহত আছে।
মেহেদী হাসান বাংলাদেশ পুলিশের নায়েক পদে (NCO- Non Commission officer) কর্মরত আছেন। সিআইডি, এয়ারপোর্ট ইন্টেলিজেন্স, র্যাব, প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্টপতি প্রটোকল,এপিবিএন ও ডিএমপি সহ বাংলাদেশ পুলিশের গুরত্বপূর্ণ ইউনিটে কর্মরত ছিলেন ১৫ বছরের চাকরি জীবনে। বর্তমানে কর্মরত আছেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ থেকে প্রেষনে Bangladesh Police Theatre & Cultural club এ । তাকে মেহেদী মাদার বলেই ডাকতেন। আর ঐ মহিলার চার ছেলের মধ্যে সব চেয়ে ছোট ছেলের মত বয়স হওয়ায় প্রিন্স মেহেদী কে ছেলে হিসেবেই সম্বোধন করেন। এরপর থেকেই মা ছেলের নিয়মিত চ্যাটিং হয়। ২০১৮ সালের মাঝামাঝিতে বাংলাদেশে আসার জন্য আমন্ত্রণ করেন প্রিন্স মেহেদী। তখন আইরিন ঢাকাতে আরও দুইজন বন্ধুসহ এসে ৪ দিন রাজধানী ঢাকাতে ঘুরেই ফেরত চলে যান সিংগাপুর। তবে বাকী দুই ফ্রেন্ড এর বাংলাদেশ তেমন ভাল না লাগলেও ঐ মহিলার বাংলাদেশ অনেক ভাল লেগে যায়।উপরন্তু ছেলের দেশ বলে কথা। তাই পরের বছর ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে আবারও বাংলাদেশে ঘুরতে আসেন তবে এবার শুধু ঢাকা নয় ঘুরেছেন যমুনা সেতুসহ অসংখ্য দর্শনীয় স্থান। আইরিনের অনেক ইচ্ছে ছিল ছেলে প্রিন্স মেহেদীর কুমিল্লাতে গ্রামের বাড়ি দেখা। তাই গ্রামে এসে প্রিন্স মেহেদীর নিজের মায়ের সাথে, ভাই-বোনদের ও স্ত্রী সন্তানের সাথে একদিন ও একরাত সময় কাটান। এরপর ৫ দিনের সফর শেষে আবারও সিংগাপুর ফেরত চলে যান। ২০২০ সালের শুরুতে সরকারি ট্রেনিংয়ের জন্য মেহেদী সিংগাপুর গেলে তখনও মায়ের সাথে দেখা হয়েছিল বেশ কয়েকবার।
অবশেষে ২০২২ সালে ঈদুল আযহা উপলক্ষ্যে আবারও উড়াল দেন বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে। এবারের ইচ্ছে ছেলে প্রিন্স মেহেদীর পরিবারের সাথে একদিন নয় বেশ কয়েকদিন কাটাবেন তার গ্রামের বাড়িতে। তাইতো এয়ারপোর্ট থেকে সরাসরি প্রিন্স মেহেদীর গ্রামের বাড়ি কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার বাইড়া গ্রামে আসেন। গ্রামটিও অসাধারণ সুন্দর পরিবেশে অবস্থিত। দুই পাশে হাইওয়ে রোডের মধ্যখানে আধুনিক ও আদর্শ গ্রাম। স্কুল,কলেজ, মাদ্রাসা, ২ টি ব্যাংক ও বিশাল বড় খেলার মাঠ। ১০ জুলাই থেকে ১৪ জুলাই পর্যন্ত ৫ দিন ছিলেন এই পরিবারের সাথে ও মিশেছেন গ্রামের ছোট বড় সবার সাথে । ভাষাগত সমস্যা থাকলেও এই ভদ্রমহিলা গ্রামের মানুষের সাথে সাংকেতিক ভাষা ব্যবহার করেন।ভিন্ন ধর্মের হয়েও রাজাবাড়ি মসজিদের কাজের জন্য মসজিদ কমিটির হাতে ৬০ হাজার টাকা ও বাইড়া হাফেজিয়া মসজিদে এতিম বাচ্চাদের জন্য মাদ্রাসার বড় হুজুরের নিকট নিজ হাতে ৪০ হাজার টাকা হস্তান্তর করেন। আরও কমবেশি অনেক কে দিয়েছেন অসংখ্য উপহার।ঢাকা ও টাংগাইল বাকি ৩ দিন ঘুরে ১৮ জুলাই সিংগাপুর ফেরত যাবেন বিদেশি এই মহিলা। কিন্তু কথা দিয়ে গেছেন আগামী বছরের শীতকালে অবশ্যই ঘুরতে আসবেন এই গ্রামে। কারন, বাইড়া গ্রাম তার কাছে অনেক ভাল লেগেছে এবং তিনি এই দেশের প্রেমে পড়ে গেছেন।