শার্শায় সোনালী আঁশে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখছেন কৃষক

পাট ক্ষেত

এসএম বিল্লাল হোসেন, সিমান্ত প্রতিনিধি (শার্শা) : যশোরের শার্শায় অনুকূল পরিবেশে আশানুরূপ লাভজনক হওয়ায় চলতি বছর বৃদ্ধি পেয়েছে সোনালি আঁশ খ্যাত ফসল পাট চাষ। এই চাষকে ঘিরে কৃষক আগামির সোনালি আঁশে ইতিমধ্যে রঙ্গিন স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছেন। এ অঞ্চলের মাটি পাট চাষের ক্ষেত্রে উপযোগী হওয়ায় মানের বিষয়ে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। পাট চাষে অন্যান্য ফসলের চেয়ে তুলনামূলক কম খরচ, উৎপাদন ভাল, লাভজনক ফসল ও স্থানীয় ভাবে সহজলভ্য সরাসরি পাইকারি বাজার সৃষ্টি হওয়ায় এই চাষে ঝুঁকে পড়ছেন কৃষক। এছাড়াও নিয়োমিত কৃষি বিভাগ থেকে চাষিদের উদ্বুদ্ধকরণ ও পরার্মশ প্রদান, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি সহায়তার ফলে পাট চাষে কৃষকের মধ্যে বেশ আগ্রহ বেড়েছে। সব মিলিয়ে কৃষকের জন্য সার্বিক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ায় প্রতি মৌসুমে বৃদ্ধি পাচ্ছে পাট চাষ।

উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে, চলতি বছর শার্শা উপজেলায় ৫৪৬০ হেক্টর জমিতে বাংলাদেশের সোনালি আঁশ খ্যাত অর্থকরী ফসল পাট চাষ করা হয়েছে। এই অঞ্চল পাট চাষের উপযোগী দো-আঁশ মাটি, মান ভাল, অনুকূল পরিবেশে রোগ বালাই কম, কৃষকদের প্রতি কৃষি বিভাগের উদ্বুদ্ধকরণ ও নিয়োমিত পরামর্শ, কৃষি বিভাগের মাধ্যমে সরকারি ভর্তুকির বিনামূল্যে বীজ প্রদানসহ অল্প খরচে লাভজনক হওয়ায় গত বছরের তুলনায় এ বছর ১০ হেক্টর বেশি জমিতে পাটের চাষ করা হয়েছে। চাষকৃত পাটের জাতের মধ্যে রয়েছে ইন্ডিয়ান কৃষি সেবাইন ১৩৫২৪ ও শঙ্খ, ও৯৮৯৭, দেশি রবি ১ এবং তোষা ৮। পাট চাষের উপযুক্ত সময় হল বাংলা ফাল্গুন মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে ১লা বৈশাখ ও কাটার সময় আষাঢ় মাসের শেষ পর্যন্ত। দুভাবে পাট চাষ করা যায়। প্রথমত ট্রাকটরে চাষ দিয়ে নির্ধারিত নিয়ম মেনে বীজ ছিটিয়ে ও লাইনে বোনা, এবং দ্বিতীয়ত বিনা চাষে ধানের জমিতে ছিটিয়ে পাট বীজ বোনা হয়ে থাকে। উপজেলার চাষিরা জমি চাষ দিয়ে প্রস্তুত করে বোনা এবং বিনা চাষে ধানের জমিতে ছিটিয়ে পাট চাষ করেছেন। পাটের রোগবালাইয়ের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বিছাপোকা, ঘোড়াপোকা, উড়চুঙ্গাঁ, চেলেপোকা, সাদা ও লাল মাকড় পোকার সংক্রমণ। এছাড়াও ছত্রাক ও ভাইরাস জনিত রোগও হয়ে তাকে। যেটা নিয়মানুযায়ী সময়মত ব্যবস্থা নিলে সমস্যার সমাধান সম্ভব। চাষকৃত পাট বীজ বোনার ১২০ ও ধানের জমিতে পাট বীজ ছিটিয়ে বোনার ১১০ দিনের মধ্যে পাট কাটার উপযোগী হয়। উপজেলা কৃষি বিভাগ থেকে কৃষকদের এমন পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানা যায়।উপজেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠ ঘুরে দেখা যায়, হাজার হাজার বিঘা জমিতে দেশি ও বিদেশি উচ্চ ফলনশীল জাতের পাটের চাষ করা হয়েছে। সোজা দণ্ডায়মান সেই পাট গাছ ও তার সবুজ পাতা মাঝেমাঝে বাতাসে যেন আপন মনে হেলে দুলে দোল খাচ্ছে। দেখে মনে হয় এ যেন বিসৃত মাঠ জুড়ে সবুজের সমারোহ। 

পাট চাষ সম্পর্কে কথা হয় ডিহি ইউনিয়নের দরিদূর্গাপুর গ্রামের কৃষক লাভলু মিয়া, নিজাম উদ্দিন ও জহুরুদ্দিনের সাথে। তারা বলেন, কৃষি কর্মকর্তাদের উৎসাহ ও পরামর্শ অনুযায়ী এ বছর তারা ২০ বিঘার মত ধানের জমিতে ছিটিয়ে পাট চাষ করেছেন। ধান কাটার পর সার, সেচ প্রয়োগ সহ আগাছা পরিষ্কার করে কীটনাশক স্প্রে করার পর পাট গাছ বড় এবং মোটাতাজা হচ্ছে। আগাম ব্যবস্থা নেওয়ায় প্রচন্ড দাবদাহে পাটে তেমন কোন রোগবালাই দেখা দিচ্ছে না। তবে বৃষ্টিহীন পাটক্ষেতে সেচ দিতে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। পাট কাটার আগ মূহুর্ত পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে চাষ অনুযায়ি বিঘা প্রতি ৮-১৬ মন ফলনের সম্ভাবনা দেখছেন। বাজারে পাটের দাম ভাল পেলে তারা সকলেই সব খরচ বাদ দিয়ে বিঘা প্রতি ২০-২৫ হাজার টাকার মত লাভ করতে পারবেন বলে জানান। সেই সাথে স্থানীয় ও বাইরের জেলা গুলোতে পাটখড়ির ভাল চাহিদা থাকায় বিক্রি করে এখান থেকেও বেশ ভাল টাকা তারা সকলেই আয় করতে পারবেন বলে আশা প্রকাশ করেন।

দরিদূর্গাপুরের আকবার আলি ও গোকর্ণ গ্রামের আলম্গীর হোসেন বলেন, পাট চাষ বৃদ্ধিতে সরকারি ভাবে সহায়তা বাড়াতে হবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশে রপ্তানির ব্যবস্থা করে দাম বাড়াতে উদ্যোগ নিতে হবে। পাটের প্রতিমন দাম মাঝে একবার ৬-৭ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠেছিল। এরপর আর তেমন ভাল কোন দাম পাওয়া যায়নি। গত বছর মান অনুযায়ি ১৮-২৭ শত টাকা পর্যন্ত দাম পাওয়া গিয়েছিল। দাম বৃদ্ধি পেলে চাষ বৃদ্ধি সহ পাটের সুদিন আবারও আগের মত ফিরে আসবে বলে তারা জানান।
আরো কথা হয় প্রায় ৩০ বিঘা পাট চাষ করা চাষি নিজামপুর ইউনিয়নের গোড়পাড়া বনমান্দারের শাহাজালাল, পোতাপাড়ার আব্দুল খালেক, গোড়পাড়া উত্তরপাড়ার ফজলু,  ঈদবার, আতি, ডিহি ইউনিয়নের গোকর্ণ গ্রামের হাফিজুর, হাবিল সরদার, শরিফুল ডাক্তার ও মইদুল ইসলাম, লক্ষণপুর ইউনিয়নের আলি মুনছুর, সিরাজুল ও শিমুল হোসেনের সাথে। তারা সকলেই প্রায় একই কথা বলেন।

নিজামপুর ও ডিহি ইউনিয়নে দায়িত্বরত উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা অসিত কুমার মন্ডল এবং আনোয়ার হোসেন বলেন, পাট চাষে চাষিদের পাশে থেকে ভাল ফলন পেতে সার্বিক পরামর্শ ও সহযোগিতা করা হচ্ছে। শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা প্রতাপ কুমার মন্ডল সমাজের কথাকে বলেন, চলতি মৌসুমে সরকারি প্রণোদনার শুধুমাত্র ১ কেজি করে পাট বীজ উপজেলার ৪৩০০ জন কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সার বরাদ্দ না থাকায় দেওয়া সম্ভব হয়নি। তবে পাট উন্নয়ন অধিদপ্তর থেকে চাষিদের সহায়তা করা হয়েছে। পাট চাষে চাষিদের কৃষি বিভাগ থেকে উদ্বুদ্ধকরণ সহ নিয়োমিত সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়ে থাকে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পাটের বাজার মোটামুটি ভাল। ২৫০০-৩০০০ হাজার টাকা পর্যন্ত উঠানামা করছে। তবে আমরা বিদেশে সরকারের পক্ষ থেকে যারা পাট নেয় সেসব দেশে আমাদের যোগাযোগ আছে। যদি বিদেশে রপ্তানি করতে পারি তাহলে পাটের দাম আরো বাড়বে। তবে চেষ্টা আছে সরকারের। যেটা আমরা সেমিনার থেকে জেনেছি।  



সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ