ধুমপান করতে বাজারে করোনা রোগী





চৌগাছা (যশোর) প্রতিনিধি : করোনা আক্রান্ত ওয়ান ব্যাংক চৌগাছা শাখার কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান শিপন নিজের বাসার লকডাউন উপেক্ষা করে ধূমপান করতে, বাজার করতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন শহরময়। এতে আতংকিত হয়ে পড়েছেন লোকজন।
মহল্লার বাসিন্দারা জানতে চাইলে তিনি প্রশ্ন ছুড়ে দেন, "আমি কি না খেয়ে মরব?" 
তবে মোবাইল ফোনে জানতে চাইলে তিনি জানান, জরুরি প্রয়োজনে মাস্ক ও হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করে বাইরে বের হয়েছিলাম।’
চৌগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার হাসপাতালে গিয়ে নমুনা দেন ওয়ান ব্যাংকের চৌগাছা শাখার কর্মকর্তা ওয়াহিদুজ্জামান শিপন। এরপর শনিবার যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনোম সেন্টারে পরীক্ষায় তার করোনা পজেটিভ রিপোর্ট আসে।
রোববার সকালে রিপোর্ট পৌঁছালে হাসপাতাল থেকে প্রথমে তাকে মোবাইল ফোনে বাসার বাইরে বের হিতে নিষেধ করা হয়। এরপর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা.
মোছা. লুৎফুন্নাহার লাকি, হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার ও করোনা বিষয়ক ফোকাল পয়েন্ট ডাক্তার মাসুম বিল্লাহ রোববার বেলা ১১টার দিকে তার চৌগাছা শহরের আম্রকানপাড়ার ‘পূর্বাশা’ নামে ভাড়া বাসা লকডাউন করতে যান। সে সময় ভাড়া বাসার বয়স্ক ও অসুস্থ মালিক সোনালী ব্যাংকের অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাবিবুর রহমানের অনুরোধে শুধু তিনতলায় ওহিদুজ্জামন শিপন তার স্ত্রীকে নিয়ে
যে ফ্লাটে থাকেন সেটিই লকডাউন করা হয় এবং ওহিদুজ্জামানকে তার বাসায় অবস্থান করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়। তখন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাকে এ-ও বলেন, ‘আপনার জরুরি প্রয়োজনীয় কিছু হলে ব্যাংকের কর্মচারী বা কাউকে দিয়ে আনিয়ে নেবেন, তবু বাইরে বের হবেন না। বাইরে বের হলে পুরো বাড়িটিই লকডাউন করে দিতে বাধ্য হবো।’
তবে উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার এ নির্দেশনার পরও ব্যাংক কর্মকর্তা ওহিদুজ্জামান শিপন নিয়মিত ধূমপান করতে বাসা থেকে নেমে শহরে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার সকাল সাড়ে নয়টার দিকেও তিনি বাসা থেকে নেমে ধূমপান করতে এবং আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি কিনতে মহল্লার পাশেই চৌগাছা শহরের বিভিন্ন দোকানে যান। এতে মহল্লার বাসিন্দারা আতংকিত হয়ে পড়েন। তাদের কয়েকজন এ প্রতিবেদককে বিষয়টি মোবাইল ফোনে জানান।
প্রতিবেশিরা জানান, হাসপাতাল থেকে ওহিদুজ্জামানকে মোবাইল ফোনে জানানোর পর রোববারও তিনি একইভাবে ধুমপান করতে শহরের মাইক্রোস্ট্যান্ডের একটি চায়ের দোকানে যান এবং শহরের অন্য মুদি দোকান থেকে নুডুলসসহ আনুষঙ্গিক দ্রব্যাদি কেনাকাটা করেন। পরে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তার বাড়ি লকডাউন করতে গেলে প্রতিবেশিরা এ বিষয়ে তার কাছে অভিযোগ দেন। একারণেই স্বাস্থ্য কর্মকর্তা তাকে বেশি করে সতর্ক করেছিলেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ড. মোছা. লুৎফুন্নাহার বলেন, ‘স্থানীয়রা সেদিনও এ বিষয়টি বলেছিল। আমি নিজে রোববার তার বাড়ি লকডাউনের সময়ে বারবার সতর্ক করেছি। বয়স্ক ও অসুস্থ বাড়িমালিকের অনুরোধে পুরো বাড়িটি লকডাউন করা হয়নি। এবিষয়ে ওহিদুজ্জামান শিপনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘গত মঙ্গলবার থেকে আমি অসুস্থ বোধ করতে থাকি। এরপর বৃহস্পতিবার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নমুনা দিই। রোববার আমার পজেটিভ রিপোর্ট আসে। তবে আমি বর্তমানে সুস্থ আছি।’
বাইরে বের হচ্ছেন কেন- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে ডিমসহ কিছু দ্রব্য কিনতে বাইরে বের হয়েছিলাম। তবে আমি মাস্ক পরে বের হয়েছি। হ্যান্ড স্যানিটাইজারও ব্যবহার করছি।’
আপনার সংস্পর্শে এসে দোকানি বা অন্য কেউ পজেটিভ হলে দায়িত্ব কে নেবে? আপনার ব্যাংকের ম্যানেজারকে বলে তো কর্মচারী দিয়ে আনিয়ে নিতে পারতেন।– এমন কথা বলা হলে তিনি নিরুত্তর থাকেন।
তার পূর্ববর্তী কথা স্মরণ করিয়ে দিলে এই ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমার ভুল হয়েছে। আপনাদের (সাংবাদিকদের) সাথে তো আমাদের প্রতিষ্ঠানের সুসম্পর্ক রয়েছে।’

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ