এইচ এম জহিরুল ইসলাম মারুফ
ঝালকাঠি জেলা প্রতিনিধি।
· -
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম,
আসসালামু আলাইকুম,
সবাই ভাল আছেন আশা করি।
কোরবানী:----
রাসূল (সা) বলেছেন,
‘আল্লাহ তায়ালা আযহার দিনকে এ উম্মতের জন্য মনোনীত করে এতে ঈদ প্রবর্তনের জন্য
আমাকে আদেশ করছেন।’ যে বিষয়গুলো
ঈদুল আযহাকে স্বার্থক ও
আলোকোজ্জ্বল করেছে তার মধ্যে
কোরবানি অন্যতম বিধান।
#কোরবানি কি?
কোরবানি এটি আরবি শব্দ। এর অর্থ হলঃ
১,নৈকট্য অর্জন করা
২,কাছে আসা
৩, পুন্য
*ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়,
যে কাজের মাধ্যমে স্রষ্টার নৈকট্য
অর্জন করা যায় তাকে কোরবানি বলা
হয়।
কোরবানির অপর নাম হলঃ ﺍُﺿْﺤِﻴَّﺔ যার
অর্থ হলঃ
১,জবাই করা
২, উৎসর্গ করা
৩, শিকার করা
৪, পাকড়াও করা
৫, নৈকট্য অর্জন করা
ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায়,
ﻫِﻲَ ﺫَﺑْﺢُ ﺣَﻴَﻮَﺍﻥٍٍِ ﻣَّﺨْﺼُﻮْﺹٍِ ﻓِﻲْ ﻭَﻗْﺖٍِ ﻣَّﺨْﺼُﻮْﺹٍٍٍِ ﺑِﻄَﺮِﻕٍِ
ﻣَﺨْﺼُﻮﺹٍِ
নির্দিষ্ট সময়ে,নির্দিষ্ট
পন্থায়,নির্দিষ্ট পশু জবাই করাকে ﺍُﺿْﺤِﻴَّﺔ
বলে। (ফাতওয়ায়ে শামি)
কোরবানি উম্মতে মুহাম্মদির জন্য
কোনো বিশেষ প্রথা বা অভিনব হুকুম
নয়। পুর্ববর্তি উম্মতদের উপরও ছিল।
পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে,
ﻭَﻟِﻜُﻞِّ ﺃُﻣَّﺔٍۢ ﺟَﻌَﻠْﻨَﺎ ﻣَﻨﺴَﻜًۭﺎ ﻟِّﻴَﺬْﻛُﺮُﻭﺍ۟ ﭐﺳْﻢَ ﭐﻟﻠَّﻪِ ﻋَﻠَﻰٰ ﻣَﺎ ﺭَﺯَﻗَﻬُﻢ ﻣِّﻦۢ
ﺑَﻬِﻴﻤَﺔِ ﭐﻟْﺄَﻧْﻌَـٰﻢِ ۗ ﻓَﺈِﻟَـٰﻬُﻜُﻢْ ﺇِﻟَـٰﻪٌۭ ﻭَٰﺣِﺪٌۭ ﻓَﻠَﻪُۥٓ ﺃَﺳْﻠِﻤُﻮﺍ۟ ۗ ﻭَﺑَﺸِّﺮِ ﭐﻟْﻤُﺨْﺒِﺘِﻴﻦَ
আমি প্রত্যেক উম্মতের জন্যে
কোরবানী নির্ধারণ করেছি, যাতে
তারা আল্লাহর দেয়া চতুস্পদ জন্তু যবেহ
করার সময় আল্লাহর নাম উচ্চারণ করে।
অতএব তোমাদের আল্লাহ তো একমাত্র
আল্লাহ সুতরাং তাঁরই আজ্ঞাধীন থাক
এবং বিনয়ীগণকে সুসংবাদ দাও।
[হাজ্জ,৩৪]
#কোরবানির হুকুম কি ?
=ওয়াজিব না সুন্নত ?
এ বিষয়ে ইমাম ও ফকীহদের
মাঝে দুটো মত রয়েছে।
প্রথম মত : কোরবানি ওয়াজিব।
ইমাম আওযায়ী, ইমাম লাইস, ইমাম আবু
হানীফা রহ. প্রমুখের মত এটাই।
আর ইমাম মালেক ও ইমাম আহমদ রহ. থেকে একটি মত বর্ণিত আছে যে তারাও ওয়াজিব
বলেছেন।
(এক) আল্লাহ তাআলা নির্দেশ
দিয়েছেন :
ﻓَﺼَﻞِّ ﻟِﺮَﺑِّﻚَ ﻭَﭐﻧْﺤَﺮْ
‘তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে
সালাত আদায় কর ও পশু কোরবানি
কর।’ [কাওসার,২]
আর আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের
নির্দেশ পালন ওয়াজিব হয়ে থাকে।
(দুই)
ﻋَﻦْ ﺃَﺑِﻲ ﻫُﺮَﻳْﺮَﺓَ، ﺃَﻥَّ ﺭَﺳُﻮﻝَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﻗَﺎﻝَ :
« ﻣَﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﻟَﻪُ ﺳَﻌَﺔٌ، ﻭَﻟَﻢْ ﻳُﻀَﺢِّ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﻘْﺮَﺑَﻦَّ ﻣُﺼَﻠَّﺎﻧَﺎ »
রাসূলে কারীম স. বলেছেন : ‘যে
ব্যক্তি সামর্থ্য থাকা সত্ত্বেও
কোরবানি করে না সে যেন আমাদের
ঈদগাহের ধারে না আসে।
[মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা- ৩১২৩, হাদিসটি
হাসান]
যারা কোরবানি পরিত্যাগ করে
তাদের প্রতি এ হাদিস একটি সতর্ক-
বাণী। তাই কোরবানি ওয়াজিব।
(তিন) রাসূলে কারীম স. বলেছেন
: « ﻳَﺎ ﺃَﻳُّﻬَﺎ ﺍﻟﻨَّﺎﺱُ ﺇِﻥَّ ﻋَﻠَﻰ ﻛُﻞِّ ﺃَﻫْﻞِ ﺑَﻴْﺖٍ ﻓِﻲ ﻛُﻞِّ ﻋَﺎﻡٍ ﺃُﺿْﺤِﻴّﺔ
: হে মানব সকল ! প্রত্যেক পরিবারের
দায়িত্ব হল প্রতি বছর কোরবানি
দেয়া। [মুসনাদ আহমাদ, ইবনে মাজা-
৩১২৫, হাদিসটি হাসান]
দ্বিতীয় মত : কোরবানি সুন্নাতে
মুয়াক্কাদাহ।
এটা অধিকাংশ উলামাদের মত। এবং
ইমাম মালেক ও শাফেয়ী রহ.-এর
প্রসিদ্ধ মত। কিন্তু এ মতের প্রবক্তারা
আবার বলেছেন : সামর্থ্য থাকা
অবস্থায় কোরবানি পরিত্যাগ করা
মাকরূহ।
যদি কোন জনপদের লোকেরা সামর্থ্য
থাকা সত্ত্বেও সম্মিলিতভাবে
কোরবানি পরিত্যাগ করে তবে
তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করা হবে। কেননা,
কোরবানি হল ইসলামের একটি মহান
নিদর্শন।
যারা কোরবানি সুন্নত বলেন তাদের
দলিল :
(এক) রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন :
ﺇِﺫَﺍ ﺩَﺧَﻞَ ﺍﻟْﻌَﺸْﺮُ ﻭَﻋِﻨْﺪَﻩُ ﺃُﺿْﺤِﻴَّﺔٌ ﻳُﺮِﻳﺪُ ﺃَﻥْ ﻳُﻀَﺤِّﻲَ، ﻓَﻠَﺎ ﻳَﺄْﺧُﺬَﻥَّ
ﺷَﻌْﺮًﺍ، ﻭَﻟَﺎ ﻳَﻘْﻠِﻤَﻦَّ ﻇُﻔُﺮًﺍ
‘তোমাদের মাঝে যে কোরবানি
করতে চায়, যিলহজ মাসের চাঁদ দেখার
পর সে যেন কোরবানি সম্পন্ন করার
আগে তার কোন চুল ও নখ না কাটে।
[ মুসলিম- ১৯৭৭]
এ হাদিসে রাসূল স.-এর ‘যে কোরবানি
করতে চায়’ কথা দ্বারা বুঝে আসে
এটা ওয়াজিব নয়।
(দুই) রাসূল স. তার উম্মতের মাঝে যারা
কোরবানি করেনি তাদের পক্ষ থেকে
কোরবানি করেছেন। তার এ কাজ
দ্বারা বুঝে নেয়া যায় যে
কোরবানি ওয়াজিব নয়।
শাইখ ইবনে উসাইমীন রহ. উভয় পক্ষের
দলিল-প্রমাণ উল্লেখ করার পর বলেন: এ
সকল দলিল-প্রমাণ পরস্পর বিরোধী নয়
বরং একটা অন্যটার সম্পূরক।
সারকথা হল, যারা কোরবানিকে ওয়াজিব
বলেছেন তাদের প্রমাণাদি অধিকতর
শক্তিশালী। আর ইমাম ইবনে
তাইমিয়ার মত এটাই।
