মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় মুক্তিযোদ্ধার নাম নাই!


নিউজ ডেস্কঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের দূত হিসেবে কাজ করেছেন আবদুর রৌফ চৌধুরী। দিনাজপুরের বোচাগঞ্জ উপজেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত করার ক্ষেত্রেও তাঁর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। কিন্তু স্বাধীনতা অর্জনের ৪৯ বছর পর গত ১৯ নভেম্বর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলের (জামুকা) ৭০তম সভায় মহান মুক্তিযুদ্ধের এই সংগঠকের নাম বীর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ করা হয়নি। যুক্তি হিসেবে বলা হয়েছে, তাঁর ডিজিআই নম্বর নেই, অর্থাৎ তিনি অনলাইনে বা সরাসরি জামুকার মহাপরিচালক বরাবর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি স্বীকৃতি চেয়ে আবেদন করেননি।


আবদুর রৌফ চৌধুরী ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে দিনাজপুর-১ আসন থেকে সাংসদ নির্বাচিত হন। পরে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বও পালন করেন। তিনি একটানা ১৫ বছর দিনাজপুর জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন। ২০০৭ সালের অক্টোবরে তিনি মারা যান। তাঁর একমাত্র ছেলে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বর্তমান সরকারের নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী। পিতার নাম মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় রাখার সুপারিশ জামুকা করেনি জানতে পেরে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী দুঃখ প্রকাশ করে প্রথম আলোকে বলেন, ‘এটা মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের বিষয়। আমি কী বলব?’

আক্ষেপ করে খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আমার বাবা সনদ বা সুবিধা পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমরা আবেদনও করিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়।’

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও তাঁদের পরিবারের কল্যাণ নিশ্চিত করতে ২০০২ সালে জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) আইন করা হয়। এ আইনে বলা আছে, ‘প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন, সনদ ও প্রত্যয়নপত্র প্রদানে এবং জাল ও ভুয়া সনদ ও প্রত্যয়নপত্র বাতিলের জন্য সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে জামুকা।’ অর্থাৎ, বীর মুক্তিযোদ্ধার তালিকায় নাম অন্তর্ভুক্ত করতে অবশ্যই জামুকার সুপারিশ নিতে হবে।
প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে যাঁদের নাম কখনো কোনো তালিকায় আসেনি, তাঁদের অন্তর্ভুক্ত করতে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয় ২০১৪ সালে একটি উদ্যোগ নেয়। এ জন্য অনলাইনে আবেদন আহ্বান করা হয়। পরে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত অনলাইনে ১ লাখ ২৩ হাজার ১৫৪টি আবেদন জমা পড়ে। এর পাশাপাশি বিভিন্ন মাধ্যমে মন্ত্রণালয়ে সরাসরি আরও ১০ হাজার ৯০০টি আবেদন আসে।


আমার বাবা সনদ বা সুবিধা পাওয়ার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেননি। আমরা আবেদনও করিনি। তবে এটুকু বলতে পারি, যাঁরা মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ছিলেন, মুক্তিযুদ্ধের ক্ষেত্র তৈরি করেছিলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর তাঁদের অন্ধকারে ঠেলে দেওয়া হয়।


খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী

অনলাইনে ও সরাসরি পাঠানো আবেদন যাচাই–বাছাইয়ের কাজ শুরু হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারিতে। তখন সারা দেশে ৪৭০টি উপজেলা, জেলা এবং মহানগর কমিটি গঠন করে মুক্তিযোদ্ধা যাচাই-বাছাইয়ের কাজটি হয়। কিন্তু যাচাই–বাছাইয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ ওঠায় মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা (যাঁদের নাম আগে অন্তর্ভুক্ত হয়নি) তৈরির প্রক্রিয়া স্থগিত হয়ে যায়। পরে ২০১৮ সালের জুলাই মাসে আবার যাচাই–বাছাই শুরু হয়। এসব যাচাই–বাছাইয়ে সব মিলিয়ে প্রায় পাঁচ হাজার সুপারিশ আসে। তাদের মধ্যে দুই দফায় মোট ২ হাজার ২১২ জনের নাম মুক্তিযোদ্ধাদের গেজেটে অন্তর্ভুক্ত করার বিষয়ে জামুকা সিদ্ধান্ত নেয়। এ–সংক্রান্ত গেজেট এখনো প্রকাশ হয়নি। শুধু ৬১ জন নারী মুক্তিযোদ্ধার নামের তালিকা ১৫ ডিসেম্বর প্রকাশ (গেজেট) করেছে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়।

তথ্যের উৎসঃ প্রথম আলো   


সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ