নিজস্ব প্রতিবেদক, মোস্তাকিম ফারুকীঃ
করোনাভাইরাসের সংক্রমণের কারণে এখনও অনেক কিছু বন্ধ রয়েছে। লক ডাউনে ঘর থেকে বের হওয়া ঝুকিপূর্ণ এবং ঝামেলার। শহুরে জীবনে পুরো দিনটাই কোনো না কোনো কাজের মধ্য দিয়ে পার হয়ে যায়। এর ফাঁকে আবার বাজারে গিয়ে শাকসবজি, মাছ, মাংস কেনা থেকে শুরু করে ঘরের পুরো বাজার সদাই! কিংবা খাবার তৈরি করা। ব্যস্ত জীবনে বাজারে গিয়ে কেনাকাটা করা বা খাবার তৈরির সুযোগ অনেক সময়ই হয় না। লক ডাউনে বাজারে গিয়ে জিনিসপত্র ক্রয় করে বাসায় খাবার তৈরি করার আগ্রহ মানুষের হারিয়েছে, নির্ভরতা বাড়িয়েছে অনলাইন খাবারের প্রতি। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়ে গড়ে উঠেছে অসংখ্য হোম মেড খাবারের অনলাইন ফেইসবুক পেইজ। যাদের নেই কোন লাইসেন্স, নেই কোন খাবার মান যাচাইয়ের মানদণ্ড। পেইজগুলো সাজানো রয়েছে বাহারি রঙের, নানা প্রকারের, লোভনীয় খাবারের ছবি দিয়ে।
এমনই একটি ফেইসবুক পেইজের নাম হল "নাজমিন'স কিচেন"। প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক সদস্যের পেইজে প্রবেশ করলেই দেখা যায় চিকেন গ্রীল, তেহেরী, ফ্রাইড রাইস, স্পেশাল খিচুড়ি সহ প্রায় সকল ঐতিহ্যবাহী লোভনীয় খাবারের সমারোহ। প্রচারণা বেশ জমজমাট, নিয়মিত আপডেট দিচ্ছে নিজেদের গুণকীর্তন করে। জানান দিচ্ছে তাদের ডেলিভারি বাইক ৩৬ টি, প্রতিদিন ৬০০ এর উপরে অর্ডার যাচ্ছে এবং তারাই সবার আগে সঠিক খাবার পৌছে দিচ্ছে সঠিক ঠিকানায়।
কিন্তু বাস্তব চিত্র দেখা যায় সম্পুর্ণ ভিন্ন। শুক্রবারে অর্ডার করে, শনিবারের মিলছে না খাবার। বিকাল ৫ টায় খাবার দেওয়ার কথা থাকলেও, সেই খাবার দিচ্ছে রাত ৮ টায়। ভুক্তভোগী গ্রাহক বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ড. মো. হাবিবুর রহমানের সাথে আলাপ করলে তিনি জানান,
"নাজমিন'স কিচেন" একটি প্রতারক চক্র। তারা খাবারের ছবি দেখাই একরকম, খাবার ডেলিভারি দেই সম্পুর্ন ব্যতিক্রম। এমন ঘটনার বাস্তব দৃষ্টান্ত আমি নিজেই। গত শুক্রবারে 599 টাকা মুল্যের
আস্ত মুরগীর কাচ্চি বিরিয়ানি নিম্নোক্ত নাম্বারে অর্ডার করি +8801798569979। ইফতার করব সেই উদ্দেশ্যে অর্ডার করি এবং অর্ডার নেওয়ার সময় কথা ছিল বিকাল ৫ টার মধ্যে পাটিয়ে দিবে। কিন্তু সেই খাবার পাটিয়েছে রাত ৮ টায়। তিনি আরও বলেন খাবারের বক্স খুলে আমি যা দেখছি তার জন্য আমি কোনভাবেই প্রস্তুত ছিলাম না। কি লোভনীয় মোরগ কাচ্চির ছবি দেখেছিলাম কিন্তু বাস্তবে পেয়েছি কেবল কিছু সিদ্ধ চাউল।
তাদের খাবারের নিম্ন অবস্থা রিভিউ দিলে, গ্রুপ থেকে ডিলিট করে দিচ্ছে তারা। আমার একার পক্ষে এই টাকার পরিমাণ হয়ত খুবই অল্প এবং যা পেয়েছি তা নিয়েই নিশ্চুপ হয়ে যেতে পারি। কিন্তু তাদের ভাষ্যমতে প্রতিদিন তারা ছয়শত গ্রাহকের কাছে এই খাবার পৌছে দেই। প্রতিটি গ্রাহকের কাছে পৃথকভাবে টাকার পরিমাণ অল্প হলেও, সবগুলো টাকা যখন একসাথে হবে তখন অনেক বড় অংকের সংখ্যায় পরিণত হবে টাকাগুলো। এভাবেই অনলাইন খাবারের প্ল্যাটফর্মগুলো ধোকা দিচ্ছে লক ডাউনে গৃহে অবস্থানরত মানুষদের। হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ্য লক্ষ্য টাকা। এসব প্রতারকদের আইনের আওতায় আনা প্রয়োজন।
প্রতারণা সম্পর্কে জানতে চাইলে নাজমিন'স কিচেনে ফোন দিলে তারা অস্বীকার করে এবং ফোন কেটে দেই। অন্য নাম্বার দিয়ে আবার ফোন দিলে সাংবাদিক পরিচয় শুনে নাজমিন বেগমের কাছে ফোন দিয়ে দেই। নাজমিন বেগম বলেন, করোনায় আমাদের লোকবল কম,তাই একটু অনিয়ম হচ্ছে।ভুক্তভোগী সোহেল রানা বলেন, তাদের ভুল তারা কখনো মেনে নেই না। বরং ত্রুটির কথা বলে এসএমএস করলে ব্লক করে দেই পেইজ থেকে।