যশোরের শার্শায় গরমে কদর বেড়েছে তাল শাঁস ও রসের |
জাকির হোসেন: যশোরের শার্শায় মধুমাসের প্রচণ্ড গরমে কদর বেড়েছে রসালো সুস্বাদু ফল তালের শাঁস ও সুমিষ্ট পানি রসের। মধু মাস জৈষ্ঠ্যের এই সময়ে বাজারে আম, জাম, লিচু ও কাঁঠালসহ বিভিন্ন ধরনের ফল ইতিমধ্যে ব্যাপক ভাবে উঠতে শুরু করেছে। এসব রসালো ফলের সাথে সাথে পিছিয়ে নেই প্রাকৃৃতিক ভাবে রাস্তা, মাঠ-ঘাট, বসত বাড়ির আঙ্গিনা সহ বন-জঙ্গলে গড়ে উঠা রসালো সুস্বাদু তাল শাঁস ও সুমিষ্ট রস। বাজার গুলোতে ও চলতি পথের ধারে তালগাছ তলায় গরমে ক্লান্ত পথচারি অন্যান্য ফলের মতো তালের শাঁস ও রসের স্বাধ গ্রহন এবং বাড়িতে নিতে যেন ভুলছেন না।উপজেলার বিভিন্ন এলাকার হাট বাজার, গ্রামের রাস্তায় ও সড়কের পাশে তালগাছ তলাতেই গাছি এবং ভ্রাম্যমাণ ভ্যানে করে বিক্রি করতে দেখা যাচ্ছে তাল শাঁস ও রস। একটি আস্ত তাল সাইজ ভেদে ৫ হতে ১৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি পিস তালের শাঁস কেটে বিক্রি করা হচ্ছে ৩-৫ টাকা। রস প্রতি গ্লাস বিক্রি হচ্ছে ১৫-২৫ টাকা। অন্যান্য বছরের থেকে এ বছর দাম কিছুটা বেশি হলেও ক্রেতারা স্বাছন্দে কিনছেন বলে জানান শাঁস ও রস বিক্রেতারা।
গরমে শরীরকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে তালের শাঁস। প্রচণ্ড গরমে তালের কচি শাঁস এবং এর ভেতরের সুমিষ্ট পানি তৃষ্ণা মিটিয়ে শরীরে এনে দেয় এক আরামদায়ক অনুভূতি। জানা যায়, এ সময় তাপমাত্রার কারণে ত্বক শুষ্ক হয়ে যাওয়া ও চুল পড়া রোধ করতে সাহায্য করে এটি। অতিরিক্ত ঘামের ফলে শরীর থেকে যে পানি বেরিয়ে যায় ও দূর্বলতা ভাব দেখা দেয় তা পূরণে অনেকটা সাহায্য করে তালের শাঁস ও রস। এছাড়াও এর রয়েছে বহুমাত্রিক গুণাগুণ।
তালের শাঁস বিক্রেতা তরিকুল ইসলাম, আয়ুব আলি ও ফজলু বলেন, জৈষ্ঠ্যমাস পড়ার কয়েক দিন আগে থেকেই তালের শাঁস বিক্রি শুরু করেছি। প্রতিটি আস্ত তাল আকার অনুযায়ি ৫-১৫ টাকায় বিক্রি করছি। খুচরা হিসাবে প্রতি পিচ তালের শাঁস ৩-৫ টাকা। বিক্রিও বেশ ভাল হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, অন্যান্য মৌসুমি ফল বিক্রির চেয়ে তালের শাঁসে লাভ বেশি। কিছু দিনের মধ্যে বেঁচা বিক্রি আরো বাড়বে। জৈষ্ঠ্য মাসে তালের শাঁস খাওয়ার উপযোগী সময় তাই মানুষ বেশ আগ্রহ সহকারে খাচ্ছেন এবং বাড়ির জন্য নিয়েও যাচ্ছেন।
তালের রস বিক্রেতা উপজেলার গোড়পাড়ার ফজলু, নজরুল ও আলি বকস বলেন, রোজার মধ্যে তারা তালের রস বিক্রি শুরু করেছেন। তখন প্রতিদিন ১৫০০ থেকে ১৮০০ টাকা পর্যন্ত রস বিক্রি হয়েছে। আর বর্তমানে শেষ দিকে এসে এখন প্রতিদিন ৬০০ হতে ৮০০ টাকা বিক্রি করতে পারছেন। তারা আরো জানান, তাল গাছ এবং গাছির সংখ্যা কম হওয়ায় রস উৎপাদন কম তাই দাম একটু বেশি। মৌসুমি এই ব্যবসাতে ভাল লাভ হওয়ায় সংসার বেশ ভাল ভাবে চলে যাচ্ছে। তাল শাঁস ও রস পান করা এমন বেশ কয়েকজনের সাথে কথা বললে সকলে জানান, রসালো সুস্বাদু, সুমিষ্ট পানি ও পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ বছরের ফল ও রস এটি তো খেতেই হবে। কারণ সব সময় তো আর পাওয়া যাবে না। তবে দাম একটু বেশি।
ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন এলাকা থেকে তাল সংগ্রহ করে নিয়ে এসে বিক্রি করেন হাট-বাজার, ভ্যানযোগে গ্রামে। আবার অনেক গাছি তালগাছ তলাতেই তালের শাঁস ও রস বিক্রি করে থাকেন। আবার কেউ কেউ বাজারেও রস বিক্রি করেন। অতি সুস্বাদু হওয়ায় সকল শ্রেণীর মানুষের মাঝে তালের শাঁস ও রসের বেশ কদর রয়েছে। এটি একটি জনপ্রিয় ফল ও পানীয়ও বটে। মৌসুমে উপজেলায় তালের শাঁস ও রস বিক্রি করে অনেক দরিদ্র মানুষই জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন।এলাকার বৃক্ষপ্রেমী সচেতন মহলের অভিমত, তালগাছের গুরুত্ব অপরিসীম। উপজেলায় এটির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে এবং এর পুরানো ঐতিহ্য ধরে রাখতে এখনি সরকারের বন বিভাগসহ ব্যক্তি উদ্যোগও গ্রহন করতে হবে।