ভূয়া রোগীর নামে রেফার্ড দেখিয়ে এম্বুলেন্স নিয়ে যাচ্ছিলেন স্বাস্থ্য কর্মকর্তা,পথেই আটকাল স্থানীয়রা

মোহনগঞ্জ (নেত্রকোনা) প্রতিনিধিঃনেত্রকোনার মোহনগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (ইউএইচএফপিও) ডা. মোমেনুল ইসলামের বিরুদ্ধে ভুয়া রোগী দেখিয়ে সরকারি অ্যাম্বুলেন্স ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। ঘটনা জানাজানি হলে স্থানীয়রা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে দেন। পরে সেখানে কোনো রোগী না পাওয়া গেলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।ঘটনাটি ঘটেছে গতকাল রোববার (৩০ নভেম্বর) বেলা ১১টার দিকে মোহনগঞ্জ পৌরশহরের টেংগাপাড়া এলাকায় পাইলট সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের সামনে। 

স্থানীয় সূত্র ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নথি থেকে জানা যায়, বেলা ১১টার দিকে জরুরি বিভাগ থেকে “গর্ভবতী রোগী লিমা (২৭)” নামে এক নারীর উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। রেফার্ড পত্রে রোগীর অবস্থা জটিল বলে উল্লেখ করা হয়। স্বামী হিসেবে ‘মাসুম’ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ ছিলো।রেফার্ড প্রক্রিয়া সম্পর্ন করেন,জরুরি বিভাগে কর্তব্যরত ডা. দ্বীজেশ রঞ্জন ভৌমিক ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (সেকমু) শাহজাহান সিরাজ। কিন্তু পরে অনুসন্ধান চালিয়েও ‘লিমা’ নামে কোনো রোগী বা তার স্বামীর অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রাও অ্যাম্বুলেন্সে কোনো রোগী আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখেন, কিন্তু তাতে কাউকে পাওয়া যায়নি। স্থানীয়রা অ্যাম্বুলেন্স থামিয়ে রোগী না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন করলে স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোমেনুল ইসলাম অ্যাম্বুলেন্স থেকে নেমে সিএনজি অটোরিকশাযোগে নেত্রকোনা শহরের দিকে চলে যান।

স্থানীয় বাসিন্দা কামরুল ইসলাম বলেন,স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সবসময়ই ব্যক্তিগত কাজে এম্বুলেন্স ব্যবহার করতে শুনেছি, কিন্তু কালকে যখন আবার এম্বুলেন্স নিয়ে যাচ্ছিলেন তখন বিষয়টি জানাজানি হলে, আমি সহ  স্থানীয় অনেকেই মিলে শহরের টেংগাপাড়া এলাকায় এম্বুলেন্সটি আটকিয়ে দেখি কোন রোগী নেই, ডাক্তার বসা। তখন রোগীর বিষয় জানতে চাইলে ডাক্তার এম্বুলেন্স থেকে নেমে দৌড় দিয়ে একটি সিএনজিতে উঠে নেত্রকোনা চলেযান।এ বিষয়ে উপ-সহকারী কমিউনিটি  মেডিকেল অফিসার (সেকমো) শাহজাহান সিরাজ বলেন, ডা. দ্বীজেশ স্যারের নির্দেশে এক নারীকে ডেলিভারি রোগীকে রেফার্ড করা হয়েছে। ইউএইচএফপিও স্যারের গাড়ির চালক মাসুম এসে জানায় একজন প্রসূতি রোগী আছে তাকে ময়মনসিংহ রেফার্ড করতে হবে। পরে রেফার্ড করে দিয়েছি। আসলে আমি রোগী চোখে দেখেনি। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বললে তো আর কিছু করার থাকে না। 

মেডিকেল অফিসার ডা. দ্বীজেশ রঞ্জন ভৌমিক বলেন, আমি হাসপাতালের তিন তলায় রাউন্ডে ছিলাম,তখন ইউএইচএফপিও স্যারের গাড়ির চালক মাসুম এসে জানায় একজন ডেলিভারি রোগী আছে খুবই ইমার্জেন্সি রেফার্ড করতে হবে ময়মনসিংহ। পরে সেকমো সিরাজকে বলেছি বিষয়টি দেখার জন্য।ইউএইচএফপিওর গাড়ির চালক মাসুম মিয়া বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অ্যাম্বুলেন্সে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। নেত্রকোনা নিয়ে মেকানিক দেখানো দরকার। এদিকে স্যার (ইউএইচএফপিও) যেহেতু নেত্রকোনা যাবেন, তাই গাড়িতে করে যাচ্ছিলেন। ভুয়া রোগী রেফার্ড করার বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।ঘটনা সম্পর্কে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোমেনুল ইসলাম কালবেলা বলেন, আমার গাড়ি নষ্ট থাকায় অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করেছি। অ্যাম্বুলেন্স ব্যবহার করতে গেলে একজন রোগীর নামে বরাদ্দ নিতে হয়। তাই একজন রোগীর নাম ব্যবহার করা হয়েছে। এটা একটা সাধারণ বিষয়। কিন্তু এটাকে বড় করে দেখানো হচ্ছে। তবে রাস্তায় অ্যাম্বুলেন্স আটকানো হলে নেমে সিএনজি অটোরিকশা করে চলে যাই।


সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ