চলনবিলে আগাম বন্যায় ক্ষতি ভূট্টা চাষীদের, ডুবে গেছে ৫০ হেক্টর জমি





রাজু আহমেদ, নাটোর: 
চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করায় তলিয়ে গেছে নাটোরের সিংড়া উপজেলার ডাহিয়া ও ইটালী ইউনিয়নের  ৫০ হেক্টর জমির ভুট্টা ক্ষেত। আগাম বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় পানিতে নেমেই ভুট্টা তুলতে হচ্ছে অনেক কৃষককে।
এসব কৃষক ভূট্টা নিয়ে পড়েছে বিপাকে।
মহাজন সংকটে আশানুরুপ দাম ও মিলছেনা। এতে করে এবার ভুট্টা চাষীদের মুখের হাসি হারায় গেছে। 

সরোজমিনে দেখা গেছে, টানা বৃষ্টি ও ঢলের কারণে অনেক বেশিরভাগ ভুট্টা জমি ডুবে গেছে। ডাহিয়া ইউনিয়নের বেড়াবাড়ি, কাউয়াটিকরি, শরিষাবাড়ি, ডাহিয়া, পানলি, হিজলী, সাতপুকুরিয়া গ্রামের শতাধিক কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন।
অনেকে জমি থেকে ভুট্টা তুলেছেন, কিন্তু খরচ বেশি দিতে হয়েছে। নৌকায় করে, পানিতে নেমে ভূট্টা তুলতে দেখা গেছে।
জমিতে ও বাড়ির আঙ্গিনায় এবং চলনবিলের বিভিন্ন পয়েন্টে শতাধিক কৃষক ভুট্টা ছড়ানোর কাজে ব্যস্ত।
কিন্তু প্রতিকুল আবহাওয়া এবং আগাম বন্যায় এবার  বিপাকে পড়েছে। শ্রমিকরা তলিয়ে থাকা  ভুট্টা সড়কে তোলার চেষ্টা করছে। কিছু কিছু এলাকায় সড়ক ডুবে গেছে।  ভুট্টা ছড়ানোর সংকটে পড়েছে কেউ কেউ। 

সাতপুকুরিয়া গ্রামের ভূট্টা চাষী নজরুল ইসলাম জানান, এবছর ৫ বিঘা জমিতে আবাদ করি। বিঘা প্রতি ৪০ মন করে আবাদ হয়েছে। তবে আগাম বন্যায় অনেক ভুট্টা পানিতে পড়ে গেছে। 

এবার ভুট্টার দাম ৪০০/৫০০ টাকা মন বিক্রি করছে। ভুট্টা তোলা, ছড়ানোয় খরচ অনেক। তাছাড়া আগাম বন্যায় আসায় এবার ভুট্টা চাষীদের মুখে হাসি নাই। 

কাউয়াটিকরি গ্রামের ফিরোজ মৃধার ৪ বিঘা জমির ভুট্টা ঘরে তুলতে পারেনি।
আজম মৃধা, বুলু মন্ডলসহ আরো অনেকের   জমির ভুট্টা অর্ধেক ঘরে তুলতে পারেনি। আকস্মিক পানি এসে ক্ষতির সম্মুখীন এসব কৃষক। 

ইউপি মেম্বার শারফুল ইসলাম সেন্টু জানান, কাউয়াটিকরি গ্রামের তৌফিক, মুকুল, সোহরাব, মহসিন, আজমসহ অনেকের জমির ভুট্টা তুলতে পারেনি।  রাতারাতি বন্যার পানি এসে ডুবে গেছে। 


ডাহিয়া গ্রামের কৃষক আবু হানিফ বলেন, ‘আমার ২২ বিঘা জমিতে এবার ভুট্টার ফলন ভালো হয়েছিল। কিন্তু বৃষ্টির পানি এসে জমে সব ভুট্টা নষ্ট হচ্ছে। অনেক ভুট্টা জমিতে পড়ে আছে। 

তাহেরা বেগম বলেন, আমরা গরিব মানুষ। স্বামী অসুস্থ। ঋণ করে তিন বিঘা জমিতে ভুট্টা চাষ করেছিলাম। তাও পানিতে ডুবে শেষ হয়ে গেছে। 

এ দিকে ডাহিয়া ইউপি চেয়ারম্যান আবুল কালাম কৃষকদের এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিলের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত আনন্দনগর খালে স্লুইসগেট নির্মান এবং খালের মুখ খননের ব্যবস্থার দাবি জানান।
তিনি আরো বলেন, এবার আগাম বন্যার কারনে চলনবিলে বন্যার পানি ঢুকে পড়ায় ভুট্টা চাষীরা লোকসানে পড়েছে।  বিশেষ করে আমার ইউনিয়নে অধিকাংশ কৃষক ক্ষতির সম্মুখীন।  এজন্য তিনি সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি কামনা করেছেন। 

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সাজ্জাদ হোসেন জানান, এবার উপজেলায় ১৭০০ হেক্টর জমিতে ভুট্টা চাষ হয়েছে। ঢলের পানি ও অতিবর্ষণে ডাহিয়া এলাকায় ৫০ হেক্টর জমি পানিতে ডুবে গেছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত কৃষি জমি সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। 



সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ