বৃহত্তর কুমিল্লার রাজনৈতিক গুরু আবদুল আউয়াল সাহেবের ১৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী

মোঃ রবিউল হোসাইন সবুজ, লাকসাম কুমিল্লা প্রতিনিধিঃআজ (২৮শে অক্টোবর) ২০২০ তারিখে জাতির জনকের প্রিয়, ভাই আউয়াল সাহেবের ১৩ তম মৃত্যু বার্ষিকী।আব্দুল আউয়াল (১৯২১-২০০৭) চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি থানার অন্তর্গত চেঙ্গাচাল নামক এক নিঝুম গ্রামের মুসলিম সম্ভ্রান্ত পরিবারে ১ জুলাই ১৯২১ সালে জন্মগ্রহণ করেন।তাঁহার মাতার নাম ছায়েদা খাতুন। পিতা মৌলভী ছাঈয়েদ আহমদ।একনজরে আবদুল আউয়ালের সংগ্রামী দিনগুলিঃগণ-পরিষদ সদস্য মরহুম আব্দুল আউয়াল ১৯৩৮ সালে মাত্র ১৭ বছর বয়সে ব্রিটিশ বিরোধী স্বাধীনতা আন্দোলনে জড়িত হন।১৯৩৮ সালে লাকসাম উপজেলা মুসলীম ছাত্রলীগে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন।১৯৩৯ সালে লাকসাম উপজেলা মুসলীম ছাত্রলীগের অস্থায়ী সভাপতি এবং১৯৪০ সালে লাকসাম উপজেলা মুসলীম ছাত্রলীগের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্বপালন করেন।১৯৪১ সালে পাকিস্তান দিবস পালনের উদ্দেশ্যে হাজার লোকের স্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন। এজন্য ব্রিটিশ সরকারের রোষানলে পড়ে তাহার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান লাকসামের গাজীমুড়া আলীয়া মাদ্রাসা হতে বহিষ্কৃত হন।১৯৪২ সালে ত্রিপুরা সদর দক্ষিণ মহকুমা মুসলিম ছাত্রলীগেরসাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং একই সময়১৯৪২ সালে বৃহত্তর কুমিল্লা জিলা মুসলিম ছাত্রলীগের সভাপতি ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম ছাত্রলীগ কাউন্সিলর সদস্য ছিলেন।১৯৪৩ সালে ত্রিপুরা দক্ষিণ মহকুমা মুসলিম লীগ সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।১৯৪৩ সালে ত্রিপুরা জেলা মুসলিম লীগ ও বঙ্গীয় প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিলর সদস্য হিসেবে কলকাতায় অনুষ্ঠিত প্রাদেশিক মুসলিম লীগ কাউন্সিলের প্রতিটি সভায় যোগদান করেন।

১৯৪৫ সালে চাঁদপুর জেলার কচুয়া থানার অন্তর্গত রহিমানগর বাজারে এক জনসভায় -’শয়তানের হুকুমতের কবর দিয়ে তার উপর পাকিস্তানের সৌধ নির্মাণ করিতে চলিলাম’- বলিয়া বক্তৃতা আরম্ভ করিলে ব্রিটিশ সরকার তাকে সর্ব প্রথম গ্রেফতার করেন।১৯৪৯ সালে লাকসাম উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৫৩ সালে মহকুমা আওয়ামীলীগ সম্পাদক, বৃহত্তর কুমিল্লা জিলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক ও প্রচার সম্পাদক নির্বাচিত হন।১৯৪৯ সালে মিস্ ফাতেমা জিন্নার নির্বাচন কালে তাকে মিথ্যা মাইক চুরির মামলায় গ্রেপ্তার করে এক মাস স্ব-গৃহে অন্তরীন রাখা হয়।

পূর্ব-পাকিস্তানে মুসলিম ন্যাশনাল গার্ড -এর সংখ্যা যখন ছিল প্রায় চার লক্ষ, তখন শুধুমাত্র আব্দুল আউয়াল একাই কঠোর পরিশ্রমে তিলে তিলে গড়ে তুলেছিলেন প্রায় পনের হাজার ন্যাশনাল গার্ড বাহিনী আর হাজার হাজার ছাত্র-কর্মী।আবদুল আউয়াল লাকসামে বঙ্গবন্ধু শেখ্ মুজিবুর রহমান-কে নিয়ে ১৮/০৪/১৯৫৫ সাল, ১৯৫৬ সাল, ২৫/০২/১৯৫৭ সাল, ০১/১১/১৯৬৪ সাল এবং ১২/১২/১৯৬৪ সালে জনসভা আয়োজন করেছিলেন যার অসংখ্য লিফলেট ও প্রমানাদি রয়েছে, যা স্বাধীনতা সংগ্রাম ও মুক্তিযুদ্ধের ঐতিহাসিক দলিল হিসেবে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে। এ ক্ষেত্রে আব্দুল আউয়ালকে মুক্তিযুদ্ধের একজন ইতিহাস সংগ্রাহক হিসেবে বিবেচনা করা যায় নিঃসন্দেহে।১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ্ মুজিবুর রহমান গণভবনে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলা আওয়ামীলীগের কমিটি গঠন করে আব্দুল আউয়াল-কে সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব অর্পণ করেন। তিনি উক্ত পদে ১৯৮৪ সাল অবধি জেলা আওয়ামীলীগের দায়িত্ব পালন করেন।দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামের পথ পাড়ি দিতে গিয়ে নিজের প্রতিষ্ঠিত ব্যবসা-বানিজ্য এমনকি ঘর-সংসার করার কথাটিও ভাবার সময় পাননি। ১৯৭৬ সালে মায়ের শেষ অনুরোধ রক্ষার্থে ৫৫ বছর বয়সে লাকসামের মিশ্রী গ্রাম নিবাসী শহীদ বুদ্ধিজীবি ডাঃ গোলাম মোস্তফার বিপত্নীক ছোট বোনকে বিয়ে করেন।২৮ অক্টোবর ২০০৭ তারিখ ভোরের প্রথম প্রহরে লাকসামের নিজ বাসভবনে ইতিহাসের এই মহান ব্যক্তিটি চির বিদায় নেন। যাকে উদ্দেশ্য করে বঙ্গবন্ধু ১৯৬৫ সালে আব্দুল আউয়াল-কে লেখা অনেকগুলো চিঠির মধ্যে একটিতে লিখেছিলেন-ভাই আউয়াল, আপনার নিঃস্বার্থ ত্যাগের কথা সকলে ভুলতে পারে কিন্তু আমি ভুলতে পারিনা।’আবদুল আউয়ালের লাকসামের বাসভবনে বঙ্গবন্ধু কন্যা পিতার হাতের লেখা সেই চিঠিগুলো পড়ে চোখের পানি ধরে রাখতে পারেননি।

তথ্য সূত্রঃ- আতাউল করিম জুন্নুন।


সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ