আহসান উল্লাহ বাবলু, উপজেলা প্রতিনিধি :
আশাশুনিতে ভারপ্রাপ্ত উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের বিরুদ্ধে নানাবিধ অনিয়ম, দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতসহ ক্ষমতার অপব্যবহার করে শিক্ষকদেরকে হয়রানি এবং নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে।
তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম ভারপ্রাপ্ত উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করেন ২সেপ্টম্বর-১৯ থেকে ৮ ডিসেম্বর-১৯ পর্যন্ত। ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে ২০১৯-২০ অর্থ বছরে প্রতিবন্ধীদের জন্য ডিভাইস ক্রয় বাবদ প্রায় ৯৫ হাজার টাকা বরাদ্ধ দেয়া হয়। বরাদ্ধকৃত ৯৫ হাজার টাকা থেকে উপজেলার ৬৮নং শ্রীউলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ১টি হুইল চেয়ার যার আনুমানিক মূল্য ১০হাজার ও ২টি চসমা আনুমানিক মূল্য ১৫০০ টাকা, মোট সাড়ে ১১হাজার টাকা খরজ করে উদ্বৃত্ত প্রায় ৮৩ হাজার টাকা তিনি আত্মসাৎ করেন।
দায়িত্ব পালনকালে ডিজিটাল হাজিরা মিটার ক্রয়ে একটি বৃহৎ অঙ্কের অর্থ আত্মসাৎ করায় উপজেলার অধিকাংশ ডিজিটাল হাজিরা মিটার প্রায়ই বিকল হয়ে পড়ে থাকতে দেখা গেছে। ডিজিটাল হাজিরা মিটার নষ্ট হয়ে পড়ে থাকায় নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক প্রধান শিক্ষক প্রতিবেদককে জানান, গত ২৩ অক্টোবর-১৯ স্মারক ৩.০০.০০০০.০১০.০২০.০১৯.২০১৮.১৬৫ পত্রাদেশ মোতাবেক স্ব স্ব বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে একটি করে বায়োমেট্রিক হাজিরা ক্রয়ের কথা বলা হয়। এর পরপরই ১৪
নভেম্বর-১৯ এ সংক্রান্ত উপজেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকদের সমন্বয় মিটিং এ তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলামের স্বাক্ষরিত এজেন্ডা সমূহে সচিবালয় থেকে পাঠানো পত্রাদেশটি মিটিং এর এজেন্ডা সমূহে অন্তর্ভুক্ত না করে বায়োমেট্রিক হাজিরা ক্রয়ের আদেশটি গোপন রাখা হয়। পরবর্তীতে নিম্নমানের চায়না কোম্পানি থেকে সস্তায় বায়োমেট্রিক হাজিরা নিয়ে প্রত্যেক স্কুলে সরবরাহ করা হয়। উপজেলার ১৬৭ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কর্তৃপক্ষ থেকে সাড়ে ১৬ হাজার টাকা করে নেয়া হয়। বায়োমেট্রিক হাজিরা ক্রয়ে প্রায় ১০ লক্ষাধিক টাকার বেশি আত্মসাৎ করেছেন বলে ধারণা তাদের।
দায়িত্ব পালনকালে বাইনতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রধান শিক্ষক রাহাতজান তার মুঠোফোনে ২ দিনের সি এল এর আবেদনের ছুটি মঞ্জুর না করে সি এল থাকার সত্বেও বিনা নোটিশে বিদ্বেষ প্রসূত ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর মাসের ২ দিনের বেতন কর্তন করেন। বেতন কর্তন করার পরেও সার্ভিস বুকে সেটি দেখানো হয়নি।
শিক্ষকদের সাথে রুঢ় ও অমানবিক আচরণের কারণে উপজেলা উন্নয়ন ও সমন্বয় মিটিং এ ইউপি চেয়ারম্যান আবু হেনা শাকিল কর্তৃক আনীত প্রস্তাবে তাকে তৎক্ষনাত বড়দল ক্লাস্টারে বদলি করা হয়।
ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালনের পূর্বে ২০১৯ সালে শিক্ষার্থীদের সিলিবাস নিজ দায়িত্বে তৈরী করে উপজেলার ২৫ হাজার শিক্ষার্থী থেকে প্রায় ১,৫০০০০ টাকা আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া ভারপ্রাপ্ত দায়িত্ব পালন কালে তিনি একই মাসে তিনটি পরিক্ষার ব্যবস্থা করে শিক্ষার্থীদের থেকে প্রশ্ন ফি বাবদ অতিরিক্ত প্রায় ৬০ হাজার টাকা আত্মসাত করেছেন বলেও জানান একাধিক সূত্র।
এর আগে তিনি সাতক্ষীরা জেলার শ্যামনগর উপজেলায় দায়িত্ব পালনকালে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাৎ ও অভ্যাসগত আচরণের কারণে সাতক্ষীরা-০৪ আসনের জাতীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার এমপি এমপি তার বিরুদ্ধে ১৬/১০৯৫ স্মারকে ডিও লেটার প্রদান করেন। উক্ত ডিও লেটার এর প্রেক্ষিতে তৎকালীন জেলা শিক্ষা অফিসার আনন্দ কিশোর সাহা (কুষ্টিয়া) ৫৮৬/৪ স্মারকে তদন্ত কাজ সম্পন্ন করেন। এছাড়া নড়াইল জেলা লোহাগড়া উপজেলায় ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসারের দায়িত্ব পালনকালে তারা অসৎ আচরণের কারণে তিনি বিভাগীয় মামলার স্বীকার হন।
উপজেলার বাইনতলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রাহাতজানের সাথে সি এল থাকার সত্বেও ছুটি না দিয়ে দুই দিনের বেতন কাটার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, বেতন কাটা নিয়ে একটি ভুল বোঝাবুঝি হয়েছিল কিন্তু পরবর্তীতে সমাধান হয়ে গেয়েছিলো। বায়োমেট্রিক হাজিরা ক্রয়ের ব্যাপারে প্রধান শিক্ষক গন জানতেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে একাধিক প্রধান শিক্ষক বলেন, কিছু প্রধান শিক্ষকের থেকে জোরপূর্বক চুক্তিপত্রে সই করে নেয়া হয়েছে কিন্তু প্রায় ২০ জন শিক্ষক ওই চুক্তি পত্রে সই করেন নাই।
এ বিষয়ে কথা বললে সাবেক ভারপ্রাপ্ত আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা বর্তমান সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম প্রতিবেদককে জানান, আমি দায়িত্বে থাকা কালিন প্রতিবন্ধীদের জন্য বরাদ্দকৃত অর্থের হিসাবটা আমি আপনাকে পরে জানাতে পারবো। আমাদের ফাইল যার কাছে আছে উনি এখন অফিসের বাইরে। বায়োমেট্রিক হাজিরার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, স্ব স্ব স্কুল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কোম্পানির চুক্তি হয়েছিল। "কিন্তু অধিকাংশ প্রধান শিক্ষকের বক্তব্য এ বিষয়ে উনারা কিছু জানতেন না উনাদের কাছ থেকে শুধুমাত্র একটি করে চেক নেয়া হয়েছিলো" এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেননি। তার বিরুদ্ধে আনীত বিভিন্ন অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার বিরুদ্ধে মাননীয় সংসদ সদস্য এস এম জগলুল হায়দার এমপি ডিও লেটার দিয়েছিল কিন্তু সেটির তদন্ত সম্পন্ন হয়েছে এবং প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, কাজ করতে গেলে অভিযোগ আসবে তবে সেগুলোর প্রমান মিলছে কিনা সেটিও তো দেখতে হবে।
আশাশুনি উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ সাইফুল ইসলাম জানান, আপনি যে বিষয় গুলো নিয়ে বলছেন ইতপূর্বে সেগুলো সম্পর্কে আমি কমবেশি শুনেছি। তবে রবিউল সাহেবের সঙ্গে অভিযোগ গুলোর বিষয়ে কথা হলে তারপরই আমি আপনাদেরকে বিস্তারিত জানাতে পারবো। এ ব্যাপারে আশাশুনির শিক্ষক ও সচেতন মহল উল্লেখিত ঘটনা তদন্তপূর্বক বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষের আশু হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।