
মোঃ সজীব হোসেন, মোহাম্মদপুর (ঝিকরগাছা): মাইকেল মধুসূদনের
শৈশব ও কৈশোরের সাথে মিশে থাকা কপোতাক্ষ নদ
আজ তার চির চেনা জল ও স্রোতের যৌবন হারিয়ে মৃতপ্রায় বৃদ্ধ মানুষের মত ধুকধুক করছে।
কালের গহ্বরে হারিয়ে যাওয়া অসংখ্য নদের মত। যেখানে এক সময় জলের সাথে জেলেদের খেলা হতো
দিন রাত, যার বুক চিরে চাঁদ উঁকি দিত; সেখানে আজ প্রখর রৌদ্র, মরুভূমির মত ফাটল দেখা
যায় নদের বুকে। মৃত প্রায় নদী এখন বাচ্চাদের খেলার মাঠে পরিণত হয়েছে ছুটিপুর -মোহাম্মদ
পুর ব্রিজ প্রান্তে। যার ফলস্বরূপ এক শ্রেণীর স্বার্থলোভী মানুষ নিজেদের আখের গোছাতে
নদীর জমি ভোগ দখলের পায়তারা করছে। এছাড়া আশপাশের বর্জ্য-আবর্জনায় ডাস্টবিনে পরিণত হয়েছে
এই নদ। বিশেষ করে পল্ট্রি ব্যবসায়ী ও গরু-ছাগলের মাংসের ব্যবসায়ীরাও তাদের বর্জ্য
ফেলার কাজে ব্যবহার করে থাকে মাইকেলের চতুষ্পদী কবিতার কপোতাক্ষ নদকে। যে নদের কথা তিনি হাজার হাজার মাইল
দূর থেকেও ভুলতে পারেননি। অথচ আমাদের পাশে অনেক সরকারি উর্ধ্বতন কর্মকর্তা-কর্মচারী
থাকা সত্তেও তাদের সু-নজর পড়তে দেখা যায় না। স্থানীয় জনগনের কাছে শুনলে বোঝা যায় কী
দুর্দশার মধ্যে বসবাস করছে নদের পাড়ের অসংখ্য মানুষ। একফোটা পানির জন্য তাদের কী আহাজারি,
কী দুঃখ কী কষ্ট, লোকমুখে অসংখ্য বার নদের নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেজিং এর কথা শোনা
গেলেও কার্যকরি কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে দেখা যায়নি। নানা কারণে বার বারই ড্রেজিং কাজ
থমকে গেলেও নদকে কেন্দ্র করে এক শ্রেণীর মানুষের গড়ে তোলা মাছের ভেরি, জমি দখল করে
পুকুর তৈরি বেড়েই চলেছে নিয়মিত। যার ফলস্বরূপ নদকে সংকীর্ণ খালে পরিণত হতে দেখা যাচ্ছে।
নদে পানি না থাকায় প্রচন্ড গ্রীষ্মে আশপাশের গ্রামগঞ্জের টিউবওয়েল পানি থাকে না। ভোগান্তিতে
দিন কাটে এই অঞ্চলের প্রতিটি মানুষের। তবুও এই অঞ্চলের মানুষ আশায় বুক বেধে আছে যে
খুব দ্রুতই তাদের দুঃখ দূর্দশার অবসান ঘটবে। কপোতাক্ষ নদ ফিরে পাবে তার পূর্বের যৌবন, জেলেরা
ফিরে পাবে তাদের যুদ্ধের জলরাশিকে, অবশান হবে স্বার্থশিষ্ঠ ব্যক্তির কালহাতের ছোবলের,
নদ মুক্তি পাবে জমি দখলের অভিশাপ থেকে, নদের দুই পাড়ে গড়ে উঠবে প্রসস্থ রাস্তা, রচিত
হবে নতুন কবিতা, প্রাণ ভরে নিঃশ্বাস নেবে আমাদের নতুন প্রজন্ম, আবার দেখতে পাবে জলের
খেলা, হয়তো দুর থেকে মাইকেল আবারও বলবে-
সতত, হে নদ তুমি পড় মোর মনে
সতত তোমার কথা ভাবি এ বিরলে।
সতত যেমনি লোক নিশার স্বপনে
শোনে মায়া যন্ত্র ধ্বনি তব কলকলে
জুড়াই এ কান আমি ভ্রান্তির ছলনে।
বহু দেশ দেখিয়াছি বহু নদ দলে
কিন্তু এ স্নেহের তৃষ্ণা মেটে কার জলে
দুগ্ধস্রোতরূপি তুমি মাতৃভূমি স্তনে।
আর কি হে হবে দেখা যত দিন যাবে
প্রজারূপে রাজরূপ সাগরেরে দিতে
বারি রূপ কর তুমি এ মিনতি গাবে
বঙ্গজ জনের কানে সখে-সখারিতে।
নাম তার এ প্রবাসে মজি প্রেমভাবে
লইছে যে নাম তব বঙ্গের সঙ্গীতে।
(কপোতাক্ষ নদ : মাইকেল মধুসূদন দত্ত সংকলিত)
যে কাজ হবো হবো করে আজও থমকে আছে, সেখানে যেন নদের জোয়ার লাগে৷
নদী খনন কাজের সাথে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি- কর্মকতারা তাদের সুদক্ষ কার্যকরী পরিকল্পনা
গ্রহনের মাধ্যমে দ্রুত বাস্তবায়নের দিকে নজর দেন সেই আশা করে নদকে কেন্দ্র করে জড়িত
অসংখ্য মানুষ। নদে পানি না থাকায় কাজের জন্য উপযুক্ত সময় বলেও দাবি করছে স্থানীয় জনগন,
স্থানীয় প্রকৌশল দ্রুতই এই বিষয়ে পদক্ষেপ গ্রহণ করবে বলে প্রত্যাশা করছি।
কেএন/আইটিএ-০৩/২১