রিনিকের মেডিকেলে চান্স পাওয়ার গল্প

সেলিম চৌধুরী পটিয়াঃ ছোটবেলা থেকেই রিনিকের স্বপ্ন ছিল ডাক্তার হওয়ার, সাদা অ্যাপ্রোন গায়ে জড়ানোর। অবশেষে রিনিকের সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ বগুডায় চান্স পেয়ে।চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী  উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর  গ্রামের শওকত হোসেন হারুন ও শামীমা আকতারের ছোট ছেলে আতাউল করিম রিনিক এবার মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় সফলতার সঙ্গে উত্তীর্ণ হয়েছেন।অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষক  পিতার দুই মেয়ে ও দুই ছেলে। অত্যন্ত মেধাবী রিনিক ছোটবেলা থেকেই পড়ালেখা করতে ভালোবাসে। মেধাবী এই ছাত্র এলাকার দৌলতপুর এম আর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে গোল্ডেন-এ প্লাস ও বৃত্তি পেয়ে পিএসসিতে সফলতার সহিত উত্তীর্ণ হয়। এরপর দৌলতপুর বহুমুখী উচ্চ  বিদ্যালয় থেকে জেএসসি ও এসএসসি উভয় পরীক্ষায় গোল্ডেন-এ প্লাস ও বৃত্তি পায়। স্কুলের সবাই একনামে চিনে তাকে। স্যার-ম্যামদের প্রিয় রিনিক। তারপর সে ভর্তি হয় গাছবাড়িয়া সরকারি কলেজে। কলেজের দূরের ছাত্র ছিল সে। আধাঘণ্টা রাস্তায় হেঁটে আরও দেড়ঘণ্টা গাড়িতে চড়ে চন্দনাইশের  আসতে হতো তাকে প্রতিদিন।রিনিকের ভাষ্যমতে, স্যার-ম্যাম আর বন্ধুদের আদর ভালোবাসায় কোনো কষ্টই মনে হতো না তার। রিনিকের প্রিয় বিষয় ছিল গণিত। স্যাররা বোর্ডে একদিকে প্রশ্ন লিখতেন আর অন্যদিকে তার অংক করা শেষ হয়ে যেত। একদিন তো তার এক বন্ধু স্যারকে জিজ্ঞাসা করে- স্যার রিনিক এত তাড়াতাড়ি লিখে ফেলে কীভাবে?

সে স্কুল ও কলেজ জীবনে ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, পাইলট, লয়ার, প্রোগ্রামার, ম্যাথমেটিশিয়ান আরও কত কিছুই হওয়ার স্বপ্ন দেখত। তবে সাদা অ্যাপ্রোনের মায়া উপেক্ষা করতে পারেনি সে। অত্র কলেজ থেকে এবছর রিনিকই একমাত্র মেডিকেল চান্স পাওয়া শিক্ষার্থী। কোনো মেডিকেলে কেউ আছেন বলেও জানা নেই। তাই চান্স পাবে কিনা- এ ভয়টা কলেজের সবার মতো তারও হতো  না এমন নয়। কলেজ লাইফটা ছিল তার কাছে স্বপ্নের মতো। কলেজের প্রতিটি পরীক্ষায় প্রথম হওয়া,  প্রিন্সিপাল স্যার থেকে শুরু করে সব স্যার-ম্যামরা এবং তার বান্ধুরা অনেক অনেক বেশি আদর করতেন তাকে। সব সময় মোটিভেট করতেন। রিনিক কোনোদিন মন খারাপ করে থাকলে স্যার-ম্যামরা জিজ্ঞাসা করতেন- কী হয়েছে রিনিক মন খারাপ কেন? তুমি কি অসুস্থ? এ জিনিসগুলো যে কত বড় পাওয়া!

পিতা-মাতার আদরের  ছেলে রিনিক। তারা কখনো পড়ালেখা করতে চাপাচাপি করেননি। ইনফ্যাক্ট তার আম্মু আব্বু বলতেন এত পড়তে হবে না। মেডিকেলে না হলে আরও অনেক ভার্সিটি আছে। কোনো চাপ নেয়ার দরকার নেই। রেজাল্টের আগের দিন রাতেও বুঝিয়ে বলেছেন অন্য কোথাও পড়াবেন সমস্যা নেই। সব সময় সাপোর্ট করতেন তাকে; যা চাইতো উনাদের কাছে তার চেয়েও বেশি দিতেন। রিনিক বলেছেন, আমি মনে করি কলেজ লাইফেই অ্যাডমিশনের রুট গড়ে নেওয়া উচিত। আর এতে আমার সম্মানিত স্যাররা, আম্মু-আব্বু আমাকে সর্বোচ্চ সাহায্য করেছেন। উনাদের দোয়া ও মহান আল্লাহর ইচ্ছায় আমি মেডিকেলে চান্স পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ। রিনিক সবার কাছে দোয়া চেয়ে জানান, মহান আল্লাহর ইচ্ছায় সে যেন একজন ভালো ডাক্তার হয়ে সত্য ও ন্যায়ের পথে থেকে সবার সেবা ও পেশাদারি দায়িত্ব পালন করতে পারেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ