সরকারি নির্দেশ অমান্য করে চাঁদাবাজের রাজত্ব গড়েছেন আমিনুল ইসলাম রাজু

মোস্তাকিম ফারুকীঃ করোনার সংকটে ফুটপাতের হকাররা যখন আর্থিক সংকটে দুর্বিসহ জীবন কাটাচ্ছেন, ঠিক তখনই রাজধানীর মতিঝিল এলাকার হলিডে মার্কেটে চাঁদাবাজির চালিয়ে যাচ্ছে একটি চক্র।
স্থানীয় একটি সংঘবদ্ধচক্র,ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে নিয়মিত চাঁদা তুলে নিজেদের পকেট ভারি করছে। সরজমিনে দেখা যায় প্রতি শুক্রবারে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে প্রশস্থ রাস্তায় হকারদের হলিডে মার্কেট বসে। ৮০০ থেকে ১০০০ হাজার হকারের সমাগম ঘটে সেখানে। চাঁদা দিলে দোকান মেলা যায়, তাছাড়া দোকান বন্ধ রাখতে হয়। প্রতি দোকান থেকে আদায় করা হয় ২৫০ করে টাকা। সেই হিসেবে প্রতি সপ্তাহে ১০০০ দোকান থেকে আড়াই লক্ষ্য টাকা আদায় করা হয়। যার মাসিক পরিমাণ দাঁড়ায় ১০ লক্ষ্য টাকা। করোনার সংকটময় সময়ে হকাররা নিঃস্ব হয়েছে। লক ডাউনে ক্রেতার সংখ্যাও খুব অল্প পরিমাণে আসছে। কোন রকম চলছে তাদের জীবন। তারপরও চাঁদা দেওয়ার হাত থেকে রেহাই পাচ্ছে না এসব ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীরা। বেচাকেনা যাই হউক, দোকান খোলতে হলে দিতেই হবে চাঁদা। চাঁদা না দিলে হতে হচ্ছে অত্যাচারের স্বীকার। বাথরুমে নিয়ে আটকে রাখা হয়, অমানবিক নির্যাতন চালাই। স্থানীয় একাধিক সুত্রে জানা যায়, এসব অপকর্মের নেপথ্যে মুল কারিগর আমিনুল ইসলাম রাজু ওরফে ছোট রাজু। তার নির্দেশেই শাহজাহান মৃধার নেতৃত্বে একদল মাস্তান বাহিনী  এই চাঁদা তোলার কার্যক্রম পরিচালনা করেন।
হলিডে মার্কেটের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ী রফিকুল ইসলাম জানান, অসহায়, দরিদ্র হকারদের কথা চিন্তা করে, গত বছরে ২৬শে মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে হলিডে মার্কেটকে চাঁদামুক্ত করার নির্দেশনা দিয়েছিলেন। নির্দেশনার এক বছর পার হতে যাচ্ছে, তাও কোন বাস্তব পদক্ষেপ নিচ্ছে না স্থানীয় প্রশাসন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, হলিডে মার্কেটের সাথেই ১০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলারের কার্যালয়। জনপ্রতিনিধির নাকের ডগায় হচ্ছে এমন অপকর্ম, তিনি যেন দেখেও দেখেন না।
হলিডে মার্কেট ছাড়াও, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের আশেপাশে প্রতিদিন প্রায় ২০০ হকার দোকান খোলেন। যেই দোকানের উপর নির্ভর করে চলে তাদের সংসার। স্থানীয়ভাবে এসব দোকান খোললেও, চাঁদার হাত থেকে রেহাই পাই না কেউ। তাদেরকেও দিতে হয় প্রতিদিন ২০০ করে চাঁদা।
অতি সন্নিকটে মতিঝিল থানা থাকলেও, পুলিশরা রয়েছে নিশ্চুপ।
ছিন্নমূল হকার্স সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কালাম জুয়েল বলেন, তাদের প্রতিনিয়ত জিম্মি করে চাঁদা নেওয়া হচ্ছে। চাঁদা ছাড়া দোকা মেলা যাচ্ছে না।তিনি আরও বলেন, চাঁদা যদি দিতেই হবে তবে আমরা বৈধভাবে সরকারের ফান্ডে দিতে চাই। এসব সন্ত্রাস বাহিনীর হাত থেকে আমরা মুক্তি চাই।
মার্কেট ব্যাবসায়ী বাবুল বলেন, আমরা সারা দিন বিক্রি করে যে টাকা আয় হয়, তার পুরোটা ই চাদা হিসেবে চলে যায়। এই সংকটের সময় এমন চাঁদাবাজী নিয়মিত চলতে থাকলে কিছু দিন পর আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।
উল্লেখ্য যে, ২০০৮ সালে ওয়ান ইলিভেনের পর ফুটপাতের ক্ষুদ্র ব্যাবসায়ীদের স্বার্থে ঢাকা শহরে কিছু হলিডে মার্কেট চালু হয়েছিল। মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের সামনে হলিডে মার্কেটটি সেগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি।

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ