লতিকচু চাষে বাজিমাত করলো মেহেরপুরের চাষিরা

তানভীর আহমেদ, মেহেরপুর জেলা প্রতিনিধিঃ মেহেরপুর জেলা শহরের উপকন্ঠে দিঘিরপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া (৫০)। প্রথমবার লতি কচু চাষ করে বাজিমাত করেছেন। মেহেরপুর কৃষি বিভাগের পরামর্শে ২৪ কাঠা জমির লতি কচু ইতিমধ্যে তিনি বিক্রি করেছেন ১ লাখ ২০ টাকার। এখনো লাখ খানেক টাকার বিক্রির আশা করছেন এই চাষি। তুলনামূলক নিচু স্যাতস্যাতে জমিতে ভালো জন্মে এই কন্দাল জাতের লতি কচু।

পুষ্টিগুণে ভরপুর এই কচুর ফুলও বিক্রি হচ্ছে ৩০ টাকা কেজি দরে। বর্তমানে মেহেরপুরের খুচরা বাজারে লতি কচু বিক্রি হচ্ছে ৫০-৬০ টাকা কেজি। বাবু মিয়ার ২৪ কাটা জমিতে প্রতি সপ্তাহে ৪-৫ মণ কচু তোলা যায়। বিঘাপ্রতি লতি কচুতে খরচ প্রায় ৩০ হাজার টাকা। তবে বাবু মিয়ার খরচ হয়েছে ১২ হাজার টাকা। বাকি খরচ বহণ করেছে মেহেরপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। বাবু মিয়ার দেখাদেখি ইতিমধ্যে অনেকেই ঝুকছেন লতি কচু চাষে। জেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে এবছর মেহেরপুর ১০ হেক্টর জমিতে এই লতিকচু চাষ হচ্ছে।

কৃষি নির্ভর মেহেরপুর জেলা সবজি চাষের জন্য দেশজুড়ে সুখ্যাতি আছে লতিরাজ কচুর। তবে কন্দাল জাতের লতি কচু বানিজ্যিকভাবে চাষাবাদ হয়নি। জেলায় প্রথম এবছর বাবু মিয়া কন্দাল জাতের লতিকচুর চাষ করেছেন। গত দু'তিন বছর ধরে কৃষি বিভাগের পরামর্শে অনেক কৃষক লতিরাজ কচু চাষ করছেন। তারা লাভবান হওয়াতে জেলায় লতিরাজ কচুচাষ বাড়ছে। এবার বাড়বে কন্দালজাতের লতিকচু চাষ।

বাবু মিয়া বলেন, শীতের শেষে জমিতে বীজ লাগাই। লাগানোর তিন মাস পর থেকেই লতিকচু তোলা শুরু করি। ক্ষেত থেকে দুই সপ্তাহ পর পর কচুর লতি তোলা হয়। আর এক মাস পর পর কচুর ফুল সংগ্রহ করে বিক্রি করি। চার থেকে পাঁচ মাস পর কচুর কন্দ তোলা হয়। কন্দাল জাতের লতিকচু হওয়ায় জমিতে সবসময় পানি দিয়ে স্যাসস্যাতে করে রাখতে হয়। এ পর্যন্ত ১লাখ ২০ হাজার টাকার লতি, ১৫ হাজার টাকার ফুল, ৫ হাজার টাকার বীজ বিক্রি করেছেন। এখনও ১ লাখের বেশি বেচাকেনা করতে পারবো। চলতি মৌসুমেও তিনি ২ বিষা জমিতে চাষ করবেন বলে জানান।

গোলাম হোসেন (৪৫) নামের এক চাষি বলেন, কচু একবার লাগালে লতি, মুখী (ছড়া), ফুলসহ কয়েক ধরনের সবজি পাওয়া যায়। আর বাজারে এসবের চাহিদাও ভালো। বাবু মিয়া কৃষি বিভাগের পরামর্শে জমিতে লতিকচু ফলিয়েছেন। তার দেখাদেখি এখন আমিও ১ বিঘা জমিতে চাষ করেছি।

সবজি বিক্রেতা খলিলুর রহমান জানান- উপজেলার বাজারগুলোতে প্রতি কেজি লতি ৫০ থেকে ৬০ টাকায় এবং ফুল ৩০ থেকে ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হয়। এ ছাড়া একেকটি কন্দাল কচু ৩০ থেকে ৫০ টাকায় বিক্রি হয়।

লতি কচুর পাইকারী ক্রেতা মেহেরপুর জেলা শহরের আড়ৎদার শাহি, রাজ্জাক, ইনতাজ আলী অভিন্নসুরে বলেন, লতি কচু উন্নত মানের সবজি হওয়ায় ঢাকায় ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। গাজীপুর চৌরাস্তা, সাভার, কারওয়ান বাজার, যাত্রাবাড়ী, শ্যামবাজার, জয়দেবপুর চৌরাস্তাসহ সিলেট ও চট্টগ্রামে পাঠানো হয়। এবার নতুন করে কন্দাল জাতের লতিকচু চাষ হয়েছে। চাহিদাও ব্যাপক।

সদর উপজেলা কৃষি অফিসার নাসরিন পারভিন জানান, মেহেরপুররে লতিরাজ কচু চাষ হলেও কন্দাল ফসল লতি কচু চাষ হয় না বললেই চলে। কন্দাল ফসল উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রথম মেহেরপুরে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এর সহযোগিতায় কৃষক বাবু মিয়া লতিকচু চাষ করছেন। লতিকচু চাষে এই সাফল্য অনেক কৃষককে অনুপ্রাণিত করেছে। শুধুমাত্র নিচু জমিতেই নয়, বসতবাড়ির আশেপাশে স্যাতস্যাতে জমিতে সহজেই লতিকচু চাষ করে পুষ্টিচাহিদা পূরণ করা সম্ভাব। মেহেরপুরের লতিকচু ভবিষ্যৎতে দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি হবে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ পরিচালক স্বপন কুমার খাঁ জানান, লতিকচু ও কন্দাল জাতের লতিকচু একই হলেও কন্দাল জাতে ফলন বেশি। কন্দাল জাতের লতিকচু ঘণ করে লাগাতে হয়। এবং সবসময় জমিতে পানি সংরক্ষণ রাখা প্রয়োজন। যাতে লতি ও ফুল বেশী হয়। কারণ লতি ও ফুল উৎকৃষ্ট সবজি হিসেবে বিক্রি হয়। মেহেরপুরে এবার প্রথম কন্দালজাতের লতিকচু চাষ হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ