![]() |
হামলার চিহ্ন -ছবিঃ কপোতাক্ষ নিউজ |
আঃ রাজ্জাকঃফরিদপুরের ভাঙ্গায় আলগী ইউনিয়নের মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনোয়ার হোসেন মোল্লা ও ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণত সম্পাদক সাংবাদিক এটিএম ফরহাদ নান্নু'র বাড়িতে হামলা ভাংচুর বিভিন্ন ফসল বিনষ্ট, একই গ্রামের অন্য ২টি বাড়িতে আগুন সহ ৮টি বাড়িতে ব্যাপক তান্ডব চালানো ঘটনা ঘটেছে। ফের এ সংঘর্ষ যাতে সংঘটিত না ঘটে সে লক্ষে ভাঙ্গা থানা পুলিশের পক্ষ থেকে মাইকিং করা হয়েছে এবং দাঙ্গা হাঙ্গামায় ব্যবহৃত সকল দেশীয় অস্ত্র থানায় অথবা সংশ্লিষ্ট ইউনিয়ন পরিষদের জমা দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, উক্ত বিষয়টি ভাঙ্গা উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের নজরে দেওয়া হলেও প্রশাসনের বিশেষ নজরদারী না থাকায় মঙ্গলবার ভোরে সোনাখোলা ও বালিয়াচরা গ্রামের শত শত গ্রামবাসী দেশীয় অস্ত্র ঢাল, সড়কি, রাম দা, বল্লম, টেটা, ছুড়ি, চাপাতি, লাঠি সোঠা ইত্যাদি নিয়ে ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়া চালায়। একটি পর্যায়ে পরিস্থিতি ধাওয়া ও পাল্টা ধাওয়ার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকলেও সোনা খোলা গ্রামের লোকজন তাদের পার্শ্ববর্তী বেশ কয়েকটি গ্রামের লোকজনকে ভাড়া করে এনে বালিয়াচরা গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে ঢুকে ব্যাপক তান্ডব চালায়।
প্রত্যক্ষদর্শীদের অনেকের ভাষ্যমতে প্রায় চার ঘণ্টাব্যাপী গ্রামের বিভিন্ন বাড়িতে তান্ডব চলতে থাকে। এসময় নারী পুরুষ, শিশুরা নিজেদের ঘরে অবরুদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি শত শত লোকের চিৎকার শোরগোল আর উল্লাসে এসময় গোটা এলাকায় আতংক ছড়িয়ে পরে ঘরে ঘরে। খবর পেয়ে স্থানীয় থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে এসে পৌঁছালেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে তারা হিমশিম খেয়ে উঠে। সংঘাতের একটি পর্যায়ে ৩টি বাড়িতে রান্নাঘর (পাঠ কাঁঠির ঘরে) অগ্নিসংযোগ, মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও সাংবাদিক নেতার বাড়িতে, পুলিশ সদস্য আকাশ মুন্সী, আ. হান্নান, জাফর, সিরাজ শেখ, নুরু কাজী, আঃ গফফার, হাবিল, কাউসার, মিজানুর মুন্সীর বাড়িতে হামলা, তান্ডব ভাংচুর চালায়।
অগ্নিসংযোগ করার পাশাপাশি ঘরের মালামাল লুটের অভিযোগ এনে কান্নাজড়িত কণ্ঠে আব্দুল গফফার সাংবাদিকদের জানান, হামলাকারীরা তার ঘরের মালামাল ভাংচুর ও লুটপাট সহ ছোট মেয়ের বিবাহের স্বণালংকার সহ মার্কসীট, আইডি নিয়ে গেছে। আমরা গরীব মানুষ বইলা পুলিশের কাছে বিচার পাবো না !?
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা যায়, সোনাখোলা ও বালিয়াচরা গ্রামের মাঝে মাঠে খেলাকে কেন্দ্র করে বেশ উত্তেজনাকর পরিস্থিতি বিরাজ করায় উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও ভাঙ্গা থানার অফিসার ইনচার্জকে অবগত করা হয়। কিন্ত পুলিশ বিষয়টি আংশিক গুরুত্ব দেয়ায় দুটি গ্রামের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে একপক্ষ অন্যে পক্ষের উপর হামলা করতে লোকজন নিয়ে উদাম মাঠে নেমে পরে। দীর্ঘ সময় ধরে চলে এ সংঘর্ষ।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, আলগী ইউনিয়ন মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার ও ভাঙ্গা প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক নেতা এ. টি. এম ফরহাদ নান্নু'র বাড়ি সহ নয়টি বাড়িতে হামলা, ভাংচুর, তান্ডবের আলামত পাওয়া যায়। এবং ক্ষেতের অনেক রবিসশ্য, মরিচ, কুমড়ো, লাউ, পিয়াজ, পুঁইশাক, ডাটা, টমেটো, কলাগাছ ইত্যাদি বিনষ্ট, গম ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে পুরানো, পাওয়ার ট্রিলার, স্যালোমেশিন, জমিতে পানি দেওয়ার মোটা-চিকন ফিতা কুপিয়ে বিনষ্ট করার আলামত পাওয়া যায়।
হতদরিদ্র আব্দুল গফফার, হাবিল, কাউসার মুন্সী, ভুলু মুন্সী সহ একাধিক প্রতক্ষ্যদর্শীরা জানান, পুলিশ হ্যান্ড মাইকিংয়ে নিষেধ করার পরে আমাদের গ্রামের (বালিয়াচরা) লোকজন কাইজ্যা (সংঘর্ষ) থেকে বিরত থেকে যার যার বাড়িতে ফিরে যেতে থাকে আর এই সুযোগে আমাগো গ্রামে হামলা, তান্ডব, ভাংচুর, ক্ষেতে আগুন লাগিয়ে দিয়ে সর্ব শেষে দুটি বাড়িতে পাটখড়ির রান্নাঘর সহ দুইটি খড়ির মটে আগুন লাগিয়ে দেয় সোনাখোলা গ্রামের সন্ত্রাসী লোকজন। সেইসময় উপস্থিত পুলিশের তেমন ভুমিকা লক্ষ করা যায় নাই।
গফফারের বড় মেয়ে জানান, আমার ছোট বোনের বিবাহ ঠিক হওয়ায় বোনের জন্য নতুন দুই ভরি স্বর্নালংকার, হাতের ঘড়ি, পায়ের দুল এসএসসি, এইচএসসি মার্কসীট, পরিবারের অন্যদের ৩টি এনআইডিকার্ড, আমার ভাইয়ের সার্টিফিকেট সহ সব দলিলপত্র নিয়ে যায় সোনাখোলা গ্রামের লোক। আমরা গরীব বলে আমরা কী বিচার পাবো না! আমি মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দোষীদের বিচার চাই।
জাহাঙ্গীর মুন্সী বলেন, আমার পাওয়ার ট্রাক কুপিয়ে নষ্ট করে দিয়েছে।
প্রতক্ষ্যদর্শীরা সাংবাদিকদের জানান, প্রায় চার ঘন্টা যাবত দু গ্রামের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। সংঘর্ষ বন্ধে পুলিশ যেসময় হ্যান্ড মাইকিং করে, বালিয়াচরা গ্রামবাসী তখন শান্ত হয়ে ফিরে যেতে থাকে। আর ঐ দিকে শরীফ, শওকত, আয়নাল, নজরুল শিকারী, জাহাঙ্গীর মাতুব্বর, জব্বার, কটন মাতুব্বর, বাকা মাতুব্বর, আলম প্রমুখ লোকদের উষ্কানিতে সোনাখোলা গ্রামের লোকজন পুনরায় বালিয়াচরা গ্রামের ৮টি বাড়ির উপর ঝাঁপিয়ে পরে ব্যাপক তান্ডব চালায়। সংঘর্ষে, জালাল শেখ, সালেহা, লতিফা বেগম, খোকন মুন্সি, রাজ্জাক শেখ সহ কমপক্ষে ৩০ জন আহত হয়।