মোঃ সিপন, নারায়ণগঞ্জ, প্রতিনিধিঃ
নারায়ণগঞ্জের বেসরকারি চিকিৎসাসেবা প্রতিষ্ঠান ল্যাবএইড এর বিরুদ্ধে করোনার নমুনা সংগ্রহ ও পরীক্ষায় রোগিদের সঙ্গে প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে । করোনার নমুনা পরীক্ষার জন্য সাড়ে ৪ হাজার টাকা ফি আদায় করেও শর্ত মোতাবেক রোগির বাড়ি থেকে নমুনা সংগ্রহ না করে বাইরে ডেকে এনে হয়রানি করা হচ্ছে। রোগিকে সরকারি নমুনা সংগ্রহ বুথে ডেকে এনে নমুনা সংগ্রহ করে অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছে এমন অভিযোগ আসে প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে।
২১ জুলাই মঙ্গলবার এমন একটি ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়লে নারায়ণগঞ্জের সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ জেলার করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে তদন্তে নেমে প্রতিষ্ঠানটির অনিয়মের প্রমাণ পান। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকেও বিষয়টি স্বীকার করে নিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে ক্ষমা চাওয়া হয়। তবে মঙ্গলবার বিকালে সিভিল সার্জন অফিস থেকে ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখাকে করোনা পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ বন্ধ রাখতে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
জানা গেছে, শহরের কালীরবাজার মোড় এলাকায় অবস্থিত নবনির্মিত সিজিএম (চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কোর্ট ভবন) ভবনের নিচ তলায় করোনা উপসর্গ থাকা রোগিদের নমুনা সংগ্রহের জন্য একটি বুথ রয়েছে। গত ১ জুলাই থেকে সরকারি নির্দেশ মোতাবেক এখানে ২শত টাকা ফি দিয়ে নমুনা দেয় রোগিরা। এ বুথে ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখার টেকনিশিয়ান জনিও পর্যায়ক্রমে সিভিল সার্জন অফিসের মাধ্যমে দায়িত্ব পালন করেন।জনির দায়িত্ব না থাকলেও জনি বুথে উপস্থিত হন এবং ল্যাবএইড থেকে কোনো রোগি এসেছে কিনা জানতে চাইলে এক যুবক তার সামনে এসে ল্যাবএইড থেকে আনা রিসিট তার কাছে জমা দিলে তিনি তাৎক্ষণিক ওই রোগির নমুনা সংগ্রহের ব্যবস্থা করেন।
বিষয়টি উপস্থিত সাংবাদিকদের নজরে এলে ওই যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায় তার নাম জাহিদুল ইসলাম। বাসা সিদ্ধিরগঞ্জের চিটাগাং রোডে। কত টাকা দিয়ে তিনি ল্যাবএইডে পরীক্ষা করাচ্ছেন জানতে চাইলে ওই যুবক বলেন সাড়ে ৪ হাজার টাকা। তাহলে তো বাসা থেকে নমুনা সংগ্রহের কথা এখানে এলেন কেন-এমন প্রশ্নের জবাবে জাহিদ বলেন, ল্যাবএইড থেকে তাকে এখানে এসে নমুনা দিতে অনুরোধ করা হয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি থেকে বলা হয়েছে এটিও তাদের নমুনা সংগ্রহের বুথ। অর্থাৎ ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ সরকারি বুথকে নিজেদের বলে রোগিদের কাছে প্রচার করছেন।
এ ব্যাপারে বুথে থাকা ল্যাবএইডের কর্মচারী জনির সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ভাই এতে আপনাদের কোন সমস্যা? বৃষ্টির কারণে আমরা রোগির বাসায় যেতে পারিনি। তাই তাকে বুথে আসতে বলেছি। সরকারি বুথে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের রোগিদের নমুনা সংগ্রহের কোন অনুমতি রয়েছে কিনা জানতে চাইলে জনি কোন স্বউত্তর দিতে পারেননি। পরে জানা গেছে, ওই বুথে জনির কোন দায়িত্বই ছিল না। অর্থাৎ জনি শুধু ল্যাবএইডের ওই রোগির নমুনা সংগ্রহের জন্যই সেখানে যান।
বিষয়টি সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদকে অবহিত করলে তিনি তাৎক্ষণিক জেলার করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলামকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান। সেখানে গিয়ে তারা ঘটনার সত্যতা পেয়ে ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখায় অভিযান পরিচালনা করেন। সেখানে জনিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জনি এর জন্য প্রতিষ্ঠানের মার্কেটিংয়ে কর্মরত রিপনকে অভিযুক্ত করে। রিপন জানায়, ল্যাবএইড অফিসের অনুমতি নিয়েই তিনি রোগিকে কালীরবাজার বুথে যেতে বলেছেন।
পরে জেলার করোনা ফোকাল পার্সন ডা. জাহিদুল ইসলাম রোগিকে ফোন করে এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানতে চাইলে রোগি জাহিদ তাকে জানান, ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষের অনুরোধেই তিনি কালীরবাজার বুথে গিয়ে নমুনা দিয়েছেন।
ল্যাবএইডে গিয়ে সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ ও ডা. জাহিদ দেখতে পান, গতকাল ল্যাবএইড কর্তৃপক্ষ ২ জন পুরুষ এবং একজন নারীর নমুনা সংগ্রহ করেছে। এদের মধ্যে সরকারি বুথে ৩জ রোগির একজন জাহিদুল ইসলামের নমুনা সংগ্রহ করা হয়।
ডা. জাহিদও স্বীকার করেন প্রতিষ্ঠানটির এমন কাজ সরকারের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিভিল সার্জন ডা. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন,ল্যাবএইড নারায়ণগঞ্জ শাখাকে নতুন ভাবে যেন আর নমুনা সংগ্রহ করা না হয় সেজন্য চিঠি দেওয়া হয়েছে।