তিতাস নদীর নাব্য সংকট চরমে জেলেরা খুঁজছে নতুন পেশা


শাহ আলম জাহাঙ্গীর,কুমিল্লা ব্যুরো চিফঃ কুমিল্লা জেলার মুরাদনগর উপজেলার ভেতর দিয়ে প্রবাহিত তিতাস নদীর  নাব্য সংকট এখন  চরমে। নাব্য সংকটের কারণে বছরের প্রায় ৮ মাসই পানি থাকে না বয়ে চলা তিতাসের ওই ৩ উপজেলার অংশে। দখল-দূষণ ও প্রতিবছর পলি জমে ক্রমেই ভরাট হয়ে তিতাস এখন মৃত নদীতে পরিণত হয়েছে। ফলে কৃষিখাতে সেচের পানির অভাবে ফসল উৎপাদন হ্রাসের আশঙ্কা প্রকট হচ্ছে। তাছাড়া এমন অবস্থা পৌঁছেছে  জেলেরা খুঁজছেন এখন  বিকল্প পেশা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, তিতাস নদীর মুরাদনগর-হোমনা সংযোগ সেতুর নিচের উত্তরাংশ থেকে শুরু করে দক্ষিণাংশের তিতাস উপজেলার দাসকান্দি বাজারের গোমতীর মুখ পর্যন্ত প্রায় ১২ কিলোমিটার এলাকায় পানি শুকিয়ে চর জেগে উঠেছে। আর সেখানে অনেকেইধান চাষ করছেন। অপরদিকে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় আশপাশের কৃষি জমিগুলো সেচের অভাবে বিপাকে পড়েছেন কৃষকরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দীর্ঘদিন যাবত খননের অভাবে নদীর তলদেশে পলি জমে ভরাট হয়ে যাওয়ায় নদীর বিভিন্ন স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্য বালুচর। শুকনো মৌসুমে নদীর কোথাও কোথাও একেবারে পানি থাকে না। এর ফলে মৌসুমের আবাদকৃত ফসলের উৎপাদন ব্যাপকভাবে হ্রাস পাচ্ছে। পানি সংকটে জীববৈচিত্র হুমকির মুখে পড়েছে। এছাড়াও নদীর দুই পাড়ে বসবাসকারী মানুষ পরিবেশ বিপর্যয়ের মধ্যে বাস করছেন। বিশেষ করে মুরাদনগর, হোমনা ও তিতাস উপজেলার হাজারো জেলে পরিবার তিতাস নদী থেকে মাছ ধরার পেশা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। এসব জেলে পরিবার মানবেতর জীবনের মুখে পড়েছেন।

স্থানীয় জেলেরা জানান, বর্ষা মৌসুমে তিতাস নদীতে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করলেও শুকনো মৌসুমে চরম বিপাকে পড়েন তারা। বছরের চার মাস মাছ ধরে বাজারে বিক্রি করে সংসার চলে। বাকি আট মাস ধার দেনা করে চলতে হয়। এতে পরিবারের ভরণ পোষণের ব্যয়ভার বহনে হিমশিম পোহাতে হয়। অনেকে এ পেশা ছেড়ে বাধ্য হয়ে অন্য পেশায় জড়িয়ে পড়ছেন।মুরাদনগর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোসাম্মৎ নাজমা আক্তার বলেন, তিতাসের পানি শুকিয়ে যাওয়ায় মাছও ধরা পড়ছে না। জেলেরা এখন অন্য পেশায় চলে এলো যাচ্ছেন। কেউ কেউ পুকুরে মাছ চাষ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। এতে করে উন্মুক্ত জলাশয়ের মাছ আহরণ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। নদীটি সংস্কার করা জরুরী হয়ে পড়েছে। এটির নাব্যতা সংকট সমাধান করা না গেলে এখানকার হাজারো জেলে অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়বেন।কুমিল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী খান মোহাম্মদ ওয়ালিউজ্জামান বলেন, বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। নদীটির খনন কাজ জরুরি। এ বিষয়ে তদন্ত করে রিপোর্ট দেয়ার জন্য একটি টিম গঠন করে দেয়া হয়েছে। রিপোর্টটি হাতে পেলেই নদী খননের পরবর্তী কার্যক্রমের বিষয়ে এগুনো যাবে।


সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ