সাংবাদিক, লিটন পাঠান:
ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে স্বজন আর বন্ধুদের মিলন মেলা। মজা নিয়ে খাওয়া দাওয়া বন্ধুদের নিয়ে আড্ডা দেওয়া। গ্রামে নাড়ির টানে মা, বাবা ভাই বোনদের সঙ্গে মেলা, নতুন জামা কাপড় পড়া কিন্তু এবার অনাবিল আনন্দের আবহ নেই কোথাও।তেমন খুশির কোন জোয়ার নেই। করোনাভাইরাস মহামারির কারণে সারা বিশ্বের মত স্বাভাবিক জীবনযাপন বাংলাদেশেও থমকে গেছে।
এ অবস্থায় পবিত্র ঈদুল আজহা দরজায় কড়া নাড়ছে। ১লা আগষ্ট বাংলাদেশে পবিত্র ঈদুল আযহা উদযাপিত হবে। এদেশে গত ৮ র্মাচ প্রথম করোনা আক্রান্তের রোগী সনাক্ত হওয়ার পর থেকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে এ পযর্ন্ত অনেকেই চিরতরে বিদায় নিয়েছেন। মা, বাবা, ভাই, বোন, স্বামী, স্ত্রী, ছেলে, মেয়ে, বন্ধু ও প্রতিবেশী সহ প্রিয়জন হারানোর ব্যাথায় এখনও বয়ে বেড়াতে হচ্ছে।
এবারের ঈদ প্রকৃত খূশি বয়ে আনতে পারবে না। স্বাস্থ্য বিধি মেনে অধিকাংশ মানুষই ঘর বন্দি আত্মীয় স্বজনদের কাছ থেকে দুরে থাকতে বাধ্য হবে।
এমন পরিস্থিতিতে দেশে পালিত হচ্ছে পবিত্র ঈদ। তবে ঈদ উদযাপনের অনেক সুযোগ পাওয়া যাবে বেঁচে থাকতে পারলে । এবার ভিন্ন এক ধারায় ঈদ উদযাপিত হতে যাচ্ছে।এ বছর ঈদ উদযাপনের সেই বেঁচে থাকার লড়াইটা বড় আকারের চ্যালেঞ্জ।ঈদের নামাজ শেষে ঈদগায়ে একে অপরের সঙ্গে কুশল বিনিময় করমর্দন কোলাকুলি করে কিন্তু করোনার স্বাস্থ্য বিধিতে এবার সেটাও হতে দিচ্ছে না। এবার সমাগম করা যাবে না, ঈদের নামায পড়তে হতে পারে মসজিদে মসজিদে। সময় ভাগ করে একাধিক ঈদের জমায়েত অনুষ্ঠিত হবে। সামাজিক দুরত্ব বজায় রেখে নামাজ আদায় করতে হবে। দেশের আলেমরা ইতোমধ্যে বলছেন ঘরে বসেও ঈদের নামাজ আদায় করা যাবে।বিরত থাকতে হবে কোলাকুলি ও করমর্দন থেকে। ঈদের দিনে বাড়িতে বাড়িতে যাতায়াত ও খাওয়া দাওয়ার সেই রেওয়াজও পালিত হবে না। এবার নতুন জামাকাপড় কেনার তেমন কোন ধুম । ঈদের মেলা নেই কোথাও। প্রতিবছর ভিন্ন প্রকার মেলায় বসত ঈদগায় ছেলে মেয়ে নিয়ে অনেকেই যায় বিনোদন কেন্দ্রে।
এবার সেটাও বন্ধু প্রকৃতির দুর্যোগের সঙ্গে নিজেকে মেলে ধরতে অনেকে ছুটে যায় পর্যটক কেন্দ্রে কিন্তু এবার বাংলাদেশের বিভিন্ন পর্যটন কেন্দ্র গুলোও বন্ধ রয়েছে। সেখানে যাওয়ার উপায় নেই। মহামারী করোনা ভাইরাসের মধ্যে ঘূর্ণিঝড় আম্পানের আঘাতে বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এরমধ্যে এবার বন্যা কবলিত হয়েছে অনেক জেলার মানুষ।
এদিনে দেশের সবাইকে ঈদ মোবারক। পবিত্র ঈদুল আযহার মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ মহান আল্লাহর উদ্দেশ্যে নিজ নিজ সামর্থ অনুয্য়াী পশু কোরবানি করেন। মুসলমানদের এই ঐতিহ্য অনেক প্রাচীন। আল্লাহ তায়ালা হযরত ইবরাহিম (আঃ) কে নিদের্শ দিয়েছিলেন তার সবচেয়ে প্রিয় বস্তু কোরবানি দিতে। সৃষ্টিকর্তার উদ্দেশ্য ছিল
তার নবীর আনুগত্য পরীক্ষা করা। স্নেহের পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) ছিলেন হযরত ইবরাহিম (আঃ) সবচেয়ে প্রিয়। স্নেহমমতায় ভরা জগৎ সংসারে পিতারআপন পুত্রকে কোরবানি দেওয়া অসম্ভব এর অগ্নি পরীক্ষা। কিন্তু আল্লাহর নির্দেশ পেয়ে হযরত ইবরাহিম (আঃ) বিনা দ্বিধায় নিজ পুত্রকে কোরবানি দিতে উদ্যত হয়েই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন মহান।
আল্লাহর নির্দেশে তার ছুরির নিচে প্রিয় পুত্র হযরত ইসমাইল (আঃ) এর স্থলে কোরবানি হয়ে যায় একটি দুম্বা। প্রতীকী এই ঘটনার অন্তর্নিহিত বাণী স্ষ্টার প্রতি পরিপূর্ণ আনুগত্য ও ত্যাগ স্বীকার। ঈদুল আযহার উদ্দেশ্যে স্রষ্টার সন্তুষ্টির জন্য নিজেকে উৎসর্গ করতে প্রস্তুত থাকা।
পশু কোরবানি করা হয় প্রতীকী অর্থে। কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, পরনিন্দা, পরশ্রীকাতরতা এই সব রিপুরেই।
কোরবানি দিতে হয় হালাল অর্থে কিনা পশু কোরবানির মধ্যেই তা সম্পন্ন হয়। কিন্তু পরিত্যাগের বিষয় কোরবানির এই মর্মবাণী আমাদের সব সময় স্মরণে থাকে না, বরং ত্যাগের সাধনার চেয়ে বড় হয়ে উঠে ভোগ বিলাস অপচয়। আধ্যাত্মিকতাকে ছাপিয়ে যায় বস্তুগত আনুষ্ঠিকতা। কোরবানির মধ্যে দিয়ে উৎসর্গের মহিমা রয়েছে তার চেয়ে বড় হয়ে ওঠে ভোজনের উৎসব। পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানির মধ্যে দিয়ে আল্লাহর
প্রতি ব্যক্তিগত আনুগত্য প্রকাশের পাশাপাশি সামাজিক কিছু কর্তব্য পালনের তাগিদ ও বড় হয়ে দেখা দেয়। আমাদের দেশে বিপুল সংখ্যক দারিদ্র মানুষ দুই বেলা পেট ভরে খেতে পায় না,অ পুষ্টিজনিত রোগব্যধিতে ভোগে অনেক শিশু। তাদের মাথার উপর আচ্ছাদন নেই বলে তারা রোদে পুড়ে বৃষ্টিতে গরম কাপড়ের অভাবে তারা তীব্র শীতে কষ্ট পায় বস্তুহীন অন্নহীন। বাসস্থানহীন এই দারিদ্র জনগোষ্ঠীর দুঃখ দুর্দশার কথা ভাবা সামর্থবানদের একান্ত কর্তব্য।