জি. এম. মুছাঃ কবি ও গীতিকার মোকাম আলি খান, যশোর সদর উপজেলার ৪,নম্বর ফতেপুর ইউনিয়নের অন্তর্গত ছোট্ট একটি সিম সাম গ্রাম সুলতানপুর প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যে মোড়ানো ছায়া বিথী সবুজ শ্যামল গ্রামের বুক চিরে আঁকাবাঁকা মেঠো পথ গেছে বহুদূর, ঐ গ্রামের স্থানীয় তালবাড়িয়া উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয় পড়াকালীন সময়ে, অনেকটা খেয়ালের বশবর্তী হয়ে বন্ধু বান্ধবের পাল্লায় পড়ে, হঠাৎ মোকাম আলী খান ছড়া কবিতা গান লেখা শুরু করলেন ,বলা যেতে পারে ১৯৮০ সালে তাল বাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় দশম শ্রেণীতে পড়াকালীন সময়ে তার ছড়া কবিতা লেখার প্রথম হাতে খড়ি, পড়ালেখার পাশাপাশি ,তিনি একাধারে ছড়া, কবিতা, গান রচনা চালিয়ে যেতে লাগলেন,মোকাম আলী খান মুলতঃ ছড়াকার, কবি ও গীতিকবি, ছেলেবেলা থেকেই গানের প্রতি তাঁর গভীর অনুরাগ। তিনি বিশেষ করে আব্দুল আলীমের গানের ভক্ত। কৌশরে তাঁর সুরেলা কন্ঠের গানের খ্যাতি ছিল। ছাত্রজীবনে গান গেয়ে ও কবিতা আবৃতি করে এবং নাটক হাস্যরসিকতায় সহপাঠীদের মাতিয়ে রাখতেন, স্কুলে তাঁকে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গেতে হত, তাই তাকে আর স্কুলে অনিয়মিত থাকা সম্ভব হতো না , স্কুলের শিক্ষকদের সাথে তাঁর নিবীড় সম্পর্ক গড়ে ওঠে।প্রাইমারি স্কুলে পড়াকালীন সময় তিনি ভীষণ চঞ্চল প্রকৃতি হলেও মিশুক স্বভাবের ছিলেন, শিশুকাল থেকেই সংগীত পিপাসু বাবার অনব্যান্ড একটি রেডিও বাক্সে তালাবদ্ধ করা থাকতো, কিন্তু তাঁর একটি নকল চাবি বানিয়ে নিয়ে বাবার অনুপস্থিতিতে গান নাটক আবৃতি শুনে আবারও যথারীতি যথাস্থানে তুলে রেখে দিতেন।
লেখালেখির এক পর্যায় ১৯৮৬ সালে, ঐতিহ্যবাহী জেলা যশোরের প্রথম 'দৈনিক স্ফূলিঙ্গ'পত্রিকায় তার প্রথম ছড়া 'ময়না পাখির মেলা' প্রকাশিত হলে তাকে আর কখনো পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি, এরপর সুরকার শিল্পী চলচ্চিত্রকার পরিচালক,অভিনেতা অভিনেত্রী সকলের সাথে মেশার সুযোগ পান,ঐ সময় মোহাম্মদ রফিকউজ্জামানের একান্ত সহযোগিতায় , শেখ সাদী খানের সুরে আবিদা সুলতানার কন্ঠে বাংলাদেশ বেতার শাহবাগ এ,কবি ও গীতিকার মোকাম আলী খানের একটি আধুনিক গান বাণীবদ্ধ হয়,
ও আমি দোষ দেবোনা/
দোষ দেবোনা কারো/
দোষ দিলে যে নিজেই/
দোষী হবো আমি আরও!/
ঐ সময় তিনি যশোরের প্রখ্যাত অভিনয় শিল্পী রানু দাশের ৪৫৯ পশ্চিম রামপুরা,বাংলাদেশ টেলিভিশনের ঠিক অপজিটে, একটি বাসায় থাকতেন,বলাবাহুল্য গীতিকবি মিল্টন খন্দকার ও একই বাসায় থাকতেন, মাঝে মাঝে তার সাথে আলাপ হতো তাঁর। যশোর আর একজন প্রখ্যাত ব্যক্তি আলীমুজ্জামান দুলু, বাংলাদেশ টেলিভিশনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ছিলেন, তাঁর সহকারী ছিলেন শিল্পী রানু দাসের একমাত্র সন্তান বিশ্বজিৎ দাশ, তাঁর সাথে মোকাম আলী খানের নিবিড় ও গভীর এক সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাদের সকলের আন্তরিক সহযোগিতায়, বাংলাদেশ টেলিভিশনে গীতিকার হিসেবে তালিকাভুক্ত হন।১৯৮৮ সালে সারাদেশে ভয়াবহ বন্যা দেখা দিলো,বিশেষ করে ঢাকা শহর তখন কিছুটা পানির নিচে তলিয়ে গেল, মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়ল।
সেই সময় এরশাদ সরকার ক্ষমতায় এরশাদ গান লিখে দিলেন " তোমাদের পাশে এসে, গাইলেন এন্ড্রুকিশোর দা হিট, একদিন দুপুরে ফকির আলমগীর বেইলী রোড়ে হাজির হলেন, বললো রফিক ভাই আমি বন্যার গান করবো গান লিখে দিন,
ভাগ্যক্রমে সেদিন সেখানে কবি গীতিকার মোকামিখান উপস্থিত ছিলেন, রফিকুজ্জামান মোকাম আলীকে উদ্দেশ্য করে বললেন তুমি একটি গান লিখে দাও, আর আমি একটি লিখছি, সঙ্গে সঙ্গে মোকাম আলী খান গান লিখে।
'বানের জলে ভাইসা গ্যাছে/
কদম আলীর ঘর,/
পোলা ম্যাইয়া কদম/
হইছে দেশান্তর /'
ফকির আলমগীর গানের কথা দেখে ঐদিন দুপুরে রানু দাসের বাসায় ফোন করে মোকাম আলী খানকে চাইলেন, এবং বললেন তুমি কেমন সুর চাও, সেটা জেনে নিলেন আর বললেন আজ সন্ধ্যায় গান বিটিভিতে প্রচারিত হবে পারলে তুমি শুনবে, কতটি শোনার পরে আর যায় কোথায় কবি গীতিকার মোকাম আলি খান খুশিতে আত্মহারা হয়ে পড়লেন সেদিনের সেই খুশির কথা মনে পড়লে, আজও যেন মোকাম আলী খান নাকি শরীরটা শিউরে ওঠে।
পর্বিতিতে মহাপ্লাবন ,৮৮ নামক ১২টি গানের নিয়ে একটি এ্যালবাম বের হলে সেখানে কবি ও গীতিকার মোকাম আলি খানের একটি গান ঐ অ্যালবাম স্থান পায়।
"উড়ির চরের রাঙাবুড়ির
খবর হুনছো নি।'
মোকাম আলী খানের প্রকাশিত গ্রন্থের সংখ্যা ৪ খানাঃ-১# ছড়া গ্রন্থ ময়না পাখির মেলা( ১৯৮৬),২# সুরের আগুন সংগীত গ্রন্থ (১৯৯০), ৩# মুজিব মানে বাংলাদেশ ছড়া গ্রন্থ (২০০০), ৪#মুজিবের জন্য যেবাংলার জন্ম ছড়া গ্রন্থ, এছাড়াও এই ছড়াকার কবি গীতিকার মোকাম আলি খানের অপ্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে আছে, যা প্রকাশের অপেক্ষায়ঃ১) মুজিব ধ্রুবতারা (কাব্যগ্রন্থ ), ২) বিবর্ণ দিনও বিদীর্ণ হৃদয় (কাব্যগ্রন্থ) কবি ও গীতিকার মোকাম আলি খানের অসংখ্য ছড়া কবিতা গান অপ্রকাশিত রয়ে গেছে, যে সমস্ত লেখা এখনো আলোর মুখ দেখেনি , এমন ছড়া কবিতা গানের সংখ্যা প্রচুর।
বর্তমানে গীতি কবি মোকাম আলী খান, স্ত্রী শাহানা সুলতানা অবসর প্রাপ্ত, বৃদ্ধ মাতা জমিলা খাতুন সহ, চাকরী রত দুই পুত্র ১) মোঃ তানজামিন খান শুভ বড় কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার, ইনটোরিয়র ডেকারেশন,গুলশান - ১ ঢাকা। বিবাহিত একটি পুত্র সন্তানের জনক, ২)ছোটো ছেলে শাহরুখ খান (সৌরভ) অবিবাহিত, ম্যানেজমেন্টে মাষ্টার্স , ঢাকা বারিধারাতে একটি কোন্পানীতে কর্মরত আছে।
তাদেরকে কে নিয়ে কবি গীতিকার মোকাম আলী খান ,সুলতান পুরের নিজের পৈতৃক ভিটার বাড়িতেই বসবাস করছেন ৫৯ পেরিয়ে ৬০ এ পদার্পণ করতে যাচ্ছেন, অত্যন্ত সাদামাঠা খামখেলি অস্থির এবং বোহিমিয়ান জীবন যাপনে অভ্যস্ত, অনেক শারীরিক মানসিক আর্থিক টানা পোড়নের মধ্যেও জীবনযাপন করলেও তিনি একজন সুখী দম্পতি, নিজের কষ্টকে কখনো কাউকে বুঝতে দেন না, সদা হাসিখুশি মিষ্টিও সাদালাপী ৫ ফুট ৬ ইঞ্চির উজ্জ্বল শ্যামলা মানুষটির হেলেদুলে হাঁটাচলা সত্যিই আমাদের অনেকখানি ভাবায়!
পরিশেষে আমি তাকে একজন সফল পিতা, সফল স্বামী ও একজন সফল কবি ও গীতিকার কে, তার উত্তরোত্তর সফলতা কামনা করি পাশাপাশি, তার সফলতাকে ছুঁয়ে প্রথম শ্রেণীর গীতিকার মোকম আলি খানক অনেকখানি উতরে যেতে পেরেছেন , তাই আমি আমার মনের মনি কোঠা থেকে থেকে, অন্তরে অন্তঃস্থল থেকে, হৃদয় নিংড়ানো ভালোবাসা দিয়ে তাকে সুশোভিত করতে চাই, আগামী দিনের সামনের এগিয়ে চলার পথ ও দিনগুলো ভরে উঠুক ফুলের মত মৌ মৌ গন্ধে, সামনে এগিয়ে যাওয়ার জন্য প্রাণঢালা দোয়া ও শুভেচ্ছা সঙ্গে অনেক অনেক অভিনন্দন জানাই, তার আগামী দিনগুলো ও পথচলা ফুলের মত সুচি শুভ্র পুত পবিত্র সুখময় ও মঙ্গলময় শুভ সৌন্দর্যে ভরে উঠুক এই দোয়া করি।
লেখকঃ একজন আইনজীবী, সৃজনশীল লেখক, কবি ও গবেষক।