মঙ্গলবার (৯ জুলাই) উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরজমিনে গিয়ে গরুর এই রোগটি দেখা যাচ্ছে। এ রোগের কারণ-মূলত এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ। এক গরু থেকে আরেক গরুতে ছড়িয়ে পড়ে। আক্রান্তের সময়-রোগটি প্রধানত বর্ষার শেষে, শরতের শুরুতে বা বসন্তের শুরুতে মশা-মাছির বেশি বিস্তারের সময় ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। রোগের লক্ষণ-আক্রান্ত গরু প্রথমে জ্বরে আক্রান্ত হয় এবং খাবার রুচি কমে যায়। জ্বরের সাথে সাথে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়, পা ফুলে যায়, দুই পায়ের মাঝে পানি জমে যায়।
পশুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় চামড়া পিণ্ড আকৃতি ধারণ করে, লোম উঠে যায় এবং ক্ষত সৃষ্টি হয়। আর এ ক্ষত শরীরের অন্যান্য জায়গায় দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে। ক্ষতস্থান থেকে রক্তপাত হতে পারে। শরীরের কোথাও কোথাও ফুলে যায়। যা ফেটে টুকরা মাংসের মতো বের হয়ে ক্ষত হয় এবং পুঁজ বের হয়। পাকস্থলি বা মুখের ভেতরে সৃষ্ট ক্ষতের কারণে গরুর পানি পানে অনীহা তৈরি হয় এবং খাদ্য গ্রহণ কমে যায়।এদিকে গরুর লাম্পি স্কিন রোগ ছড়িয়ে পড়লেও এতে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিচ্ছেন প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তারা। তারা বলেছেন, খুব সাধারণ চিকিৎসায় গবাদি পশুর এই রোগ সারানো সম্ভব। সচেতনতা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এই রোগ থেকে মুক্তি দিতে পারে। লাম্পি স্কিন রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলে দ্রুত রেজিস্টার্ড ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দ্রুত চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
খামারি জবেদ আলী বলেন, আমার খামারে চারটি গরু আছে, প্রথমে ছোট বাছুরটিকে এ রোগটি আক্রান্ত করে, পরে ধীরে ধীরে সব গুরুতে আক্রান্ত করা শুরু করছে। এ নিয়ে খুব আতঙ্কে সময় পার করছি।কালীগঞ্জ উপজেলার কাজিরহাট এলাকার পল্লী চিকিৎসক আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ থেকে প্রায় দুই মাস আগে থেকে এই লাম্পি স্কিন রোগটি বিভিন্ন খামারিতে দেখা দিয়েছে। বিশেষ করে এ রোগে ১-৬ মাস বয়সের বাছুরগুলো বেশি আক্রান্ত হচ্ছে। এবং কিছু কিছু বাছুর মারা যাচ্ছে। এটা ভাইরাস জনিত হওয়ার এর রোগের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা নেই। তবে সঠিক ভাবে ভেকসিন দিলে অনেকটা নির্মূল হতে পারে।
এছাড়াও বিভিন্ন খামারিরা বলছেন, এই লাম্পি স্কিন রোগের প্রাদুর্ভাব থেকে খামারকে মুক্ত রাখা না গেলে এই অগ্রযাত্রায় বিঘ্ন ঘটতে পারে। গাভী আক্রান্ত হলে দুধ উৎপাদন শূন্যের কোটায় নেমে আসে। ফলে উৎপাদন কমে যাওয়ায় আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন খামারিরা। লাম্পি স্কিন ডিজিজ গরুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাস জনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ। দ্রুত রোগটি প্রতিরোধের ব্যবস্থা না নিলে ঝুঁকির মধ্যে পড়বে জেলার প্রাণিসম্পদ খাত।কালীগঞ্জ উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মো: মোশাররফ হোসেন বলেন, এ রোগের কারণ-মূলত এটি একটি ভাইরাস জনিত রোগ।এটা সাধারণত মশা মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। একটা অসুস্থ গরুকে যখন কোন মশা বা মাছি কামড় দিয়ে যখন সুস্থ গরুকে কামড় দেয় তখন মশা বা মাছির লালার মাধ্যমে একটা গরু থেকে অন্য গরুতে রোগটি সংক্রামিত হয়। বেশি আক্রান্ত যেনো না হয় সে বিষয়ে খামারিদের মেডিকেল টিম ও মাঠ কর্মীদের মাধ্যমে বিভিন্ন উপদেশ দেওয়া হচ্ছে।