বাদামতলিতে এখনও হাজী সেলিমের সিন্ডিকেটের প্রভাবেই চলছে চাঁদাবাজী


নিজস্ব প্রতিবেদক: পুরান ঢাকার বাবুবাজার সেতু এলাকা থেকে সদরঘাট যাওয়ার প্রধান সড়ক দুটি। একটি ইসলামপুর, অপরটি বাদামতলী সড়ক৷ বাদামতলী সড়কে এলোমেলোভাবে ফলবাহী কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক রাখায় যান চলাচল বন্ধ৷ শুধু কাভার্ড ভ্যান ও ট্রাক দাঁড় করিয়ে মালামাল নামানো নই, বরং গাড়ি রাস্তার মাঝে দাড় করিয়েই বেচাকেনা করা হয়।

জানা গেছে, বুড়িগঙ্গ নদীর তীর বাবু বাজার ব্রিজ ঘাট এলাকা থেকে সদরঘাট পর্যন্ত নদীর সীমানা ও রাস্তা দখল করে অবৈধভাবে ট্রাক স্ট্যান্ড গড়ে তুলেছে স্থানীয় প্রভাবশালী ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমের আস্থাভাজন  ফল ব্যবসায়ী করিম শেখ ওরফে বট করিম। আওয়ামিলীগ সরকার পতনের পর করিম শেখ দেশ থেকে পালালেও, আগের নিয়মেই চাঁদাবাজী অব্যাহত রেখেছে তারই আপন ছোট ভাই আফসার হাজী। প্রতিদিনই রাস্তা বন্ধ করে ফল বিক্রির গাড়ি দাঁড় করিয়ে রাখে সে।গতকাল হাজী আফসার সরকারি রাস্তার উপর একটি ট্রাক দিয়ে রাস্তা দখল করে ব্যবসা করছিলেন। এর ফলে বাদামতলীর রাস্তা পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায় এবং গাড়ি চলাচল ব্যাহত হয়। পাশেই অবস্থিত মিটফোর্ড হাসপাতাল, হাসপাতালের উদ্দেশ্যে যাওয়া মুমূর্ষু রোগীদের অ্যাম্বুলেন্স চলাচলও অব্যাহত হয়। 

এই ঘটনার প্রতিবাদ করতে গেলে হাজী আফসার, তার ক‍্যডার বাহিনী ও তার ছেলে মোঃ আল আমিন সাধারণ ব্যাবসায়ীদের উপর চড়াও হয়ে উঠে। পরক্ষণেই তার বিয়াই মনির হোসেন খান সহ ইয়াসিন (২৫), নাজমুল (৪৫) ও মিলন (৫০) সংগঠিত হয়ে ব‍্যবসাইদের উপর হামলা করে। হামলায় গুরুতর আহত হয় ৩২ নং ওয়ার্ড বিএনপির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সোহেল আহমেদ ও আরও কয়েকজন প্রতিবাদকারী। হামলায় আহত সোহেল আহমেদ জানান, আফসার হাজীর রাস্তা দখল করে জনগণের ভোগান্তির সৃষ্টির বিষয়ে প্রতিবাদ করাতে আমাদের উপর হামলা করেছে তার ক্যাডার বাহিনী। আবার আমরা যারা আহত হয়েছি আমাদেরই হত্যা মামলা দেওয়ার ভয়-ভীতি দেখাচ্ছে তিনি।

স্থানীয় বাসিন্দা ও পথচারীদের দাবি, বাদামতলী সড়কে কাভার্ড ভ্যান রাখায় ইসলামপুর সড়কে দিনের অধিকাংশ সময় যানজট লেগে থাকে। দিনে বাদামতলী সড়কে যাত্রীবাহী যান চলাচল চালু হলে ইসলামপুর সড়কের যানজট কমে আসবে। এ ছাড়া সদরঘাট এলাকা থেকে বাসে করে সহজেই রাজধানীর গাবতলী ও আমিনবাজারে যাতায়াত করা যাবে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, বাবুবাজার সেতু এলাকা থেকে ওয়াইজঘাট পর্যন্ত বাদামতলী সড়কে এলোমেলোভাবে মালবাহী ৭০ থেকে ৮০টি কাভার্ড ভ্যান রাখা আছে৷ ফুটপাত দখল করে গড়ে উঠেছে ছোট ছোট টং দোকান। বাধ্য হয়ে সড়কের ওপর দিয়ে হাঁটতে হচ্ছে পথচারীদের। কিন্তু সড়কেও ছড়িয়ে আছে ময়লা-আবর্জনা এবং ট্রাক দাঁড় করিয়ে ফল বিক্রি করছে।বাদামতলীর ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রতিদিন রাতে কাভার্ড ভ্যানে করে বাদামতলীতে ফল নিয়ে আসেন ব্যবসায়ীরা। মালামাল নামিয়ে রাতেই ভ্যানগুলো চলে যাওয়ার কথা। কিন্তু সময়মতো মালামাল খালাস না করায় এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।বাদামতলীর বায়তুল আমান জামে মসজিদের সামনের সড়কে রাখা ছিল অনেকগুলো  কাভার্ড ভ্যান। সদরঘাটের বি আই ডব্লিও টি এর ৫ নং গেইট থেকে ৯ নং গেইট পর্যন্ত ফলের গাড়ি দাঁড় করিয়ে একদম রাস্তা বন্ধ করে রাখা হয়। ৪ ভোর চারটা থেকেই দূরদুরান্ত থেকে লঞ্চ দিয়ে ২৫/৩০ হাজার যাত্রী আসে, যারা প্রত্যেকেই ভোগান্তির স্বীকার। তুহিন নামের এক চালক বলেন, ‘চট্টগ্রাম থেকে ফল নিয়ে বাদামতলী আইছি। রাতে কার্গোর (কাভার্ড ভ্যান) সব মালামাল নামানো সম্ভব হয়নি। তাই সড়কে কার্গো রাখছি। মালামাল খালাস হলে চলে যাব।’গাবতলী থেকে বেড়িবাঁধ সড়ক দিয়ে বাসে করে বাবুবাজার এসেছেন ব্যবসায়ী আবদুল কাদের। তিনি বলেন, বাদামতলী সড়কে যান চলাচল চালু থাকলে প্রায় একই ভাড়ায় বাসে করে সদরঘাট যাওয়া যেত। অথচ এখন দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে রিকশায় করে সদরঘাটে যেতে হবে। তারপরও রয়েছে ইসলামপুর সড়কের যানজট।এ ব্যাপারে হাজী আফসার বলেন,আমার মার্কেটের সামনেই আমি ট্রাক রেখে ফল নামাই। আমি কোন চাঁদাবাজির সাথে জড়িত না।রাস্তার পাশে জেডিতে ট্রাক রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিএ থেকে  ইরাজা নেওয়া হয়েছে এবং বৈধভাবেই ট্রাক রাখা হচ্ছে।


সংবাদটি শেয়ার করুন
পূর্ববর্তী সংবাদ
পরবর্তী সংবাদ