মো:আজিজুর বিশ্বাস স্টাফ রিপোর্টারঃস্মরণ করছি বিনম্র শ্রদ্ধায়। জন্ম ৪ নভেম্বর ১৯৫৫ মৃত্যু ৬ জুলাই ২০২০,সন্ধ্যে ৬টা ৫৫ মিনিটে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।বাংলা প্লেব্যাকের কিংবদন্তী শিল্পী এন্ড্রু কিশোরের ৬৫তম জন্মবার্ষিকী । ১৯৫৫ সালের ৪ঠা নভেম্বর রাজশাহীতে জন্মগ্রহন করে তিনি।২০২০ সালের ৬ই জুলাই ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান বাংলাগানের ভুবনে অনবদ্য অবদান রাখা এই শিল্পী।
তাঁর উদাত্ত কন্ঠের জাদুতে বাজার মাত করেছে অনেক ফ্লপ সিনেমার গান। আলম খান, আলাউদ্দিন আলী আর আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলদের মত সুর স্রষ্টাদের প্রথম পছন্দ। আর রুনা লায়লা, সাবিনা ইয়াসমিন কিংবা সামিনা চৌধুরীর মত শিল্পীদের চোখে সেরা সহশিল্পী এন্ড্রু কিশোর। চার দশক ধরে রাজত্ব করেছেন প্লেব্যাকের মুকুটহীন সম্রাট হিসেবে।আমার সারা দেহ খেও গো মাটি, হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস, একদিন তোমায় না দেখিলে, বেদের মেয়ে জোছনা, জীবনের গল্প, পাথরে ফুল ফোটাবো, তুমি যেখানে আমি সেখানে সহ অজস্র গানে নিটোল কারুকাজের কন্ঠস্বরের জাদুতে রঙিন করে রেখেছিলেন বাংলা গানের শ্রোতাদের৷পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেও হয়ত আরো বহুযুগ বাংলার শহর, বন্দর হাট মাঠ প্রান্তরে ছড়িয়ে থাকবে এই কিংবদন্তী শিল্পীর কন্ঠস্বর।একজন গায়ক। তিনি বাংলাদেশ সবচেয়ে বেশী ও অন্যান্য দেশের বহু চলচ্চিত্রের গানে কণ্ঠ দিয়েছেন। যেজন্য তিনি 'প্লেব্যাক সম্রাট' নামে পরিচিত। তার সবচেয়ে জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে, জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প, হায়রে মানুষ রঙের ফানুস, ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি, আমার বুকের মধ্যে খানে, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান, ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা, সবাই তো ভালোবাসা চায় প্রভৃতি।বাংলা চলচ্চিত্রের গানে অবদানের জন্য তিনি আটবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। এন্ড্রু কিশোর আব্দুল আজিজ বাচ্চুর অধীনে প্রাথমিকভাবে সঙ্গীত পাঠ গ্রহণ শুরু করেন। মুক্তিযুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গানে রেডিওতে তালিকাভুক্ত শিল্পী ছিলেন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পর কিশোর নজরুল, রবীন্দ্রনাথ, আধুনিক, লোক ও দেশাত্মবোধক গান শ্রেণিতে রাজশাহী বেতারের সঙ্গে তালিকাভুক্ত ছিলেন। এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৭ সালে আলম খান সুরারোপিত মেইল ট্রেন চলচ্চিত্রের "অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তাঁর কেউ" গানের মধ্য দিয়ে। তার রেকর্ডকৃত দ্বিতীয় গান বাদল রহমান পরিচালিত এমিলের গোয়েন্দা বাহিনী চলচ্চিত্রের "ধুম ধাড়াক্কা"।
তবে এ জে মিন্টু পরিচালিত ১৯৭৯ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত প্রতীজ্ঞা চলচ্চিত্রের "এক চোর যায় চলে" গানে প্রথম দর্শক তার গান শুনে এবং গানটি জনপ্রিয়তা লাভ করে। তিনি অন্যান্য প্লেব্যাক গান রেকর্ড করেন যেমন 'ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে', 'ভালবেসে গেলাম শুধু' এর মত জনপ্রিয় সব গান।
১৯৭৭ সালে আলম খানের সুরে ‘মেইল ট্রেন’ সিনেমায় ‘অচিনপুরের রাজকুমারী নেই যে তার কেউ’ গানের মধ্য দিয়ে এন্ড্রু কিশোরের চলচ্চিত্রে প্লেব্যাক যাত্রা শুরু হয়। সেই শুরুর পর থেকে তাকে আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। এন্ড্রু কিশোরের খুব জনপ্রিয় গানের মধ্যে রয়েছে- ‘হায়রে মানুষ রঙিন ফানুস’, ‘জীবনের গল্প আছে বাকি অল্প’, ‘ডাক দিয়াছেন দয়াল আমারে, আমার সারা দেহ খেয়ো গো মাটি’, আমার বুকের মধ্যে খানে’, আমার বাবার মুখে প্রথম যেদিন শুনেছিলাম গান’, ‘ভেঙেছে পিঞ্জর মেলেছে ডানা’, ‘সবাই তো ভালোবাসা চায়’, ‘পড়ে না চোখের পলক’, ‘পদ্মপাতার পানি’, ‘ওগো বিদেশিনী’, ‘তুমি মোর জীবনের ভাবনা’, ‘আমি চিরকাল প্রেমের কাঙাল’প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
এন্ড্রু কিশোর ৮ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছেন। এছাড়া সংগীতে অসামান্য অবদানের জন্য দেশ-বিদেশের আরও অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন উপমহাদেশের খ্যাতনামা এই শিল্পী।
এন্ড্রু কিশোর সংসার জীবনে স্ত্রী লিপিকা এন্ড্রু এবং সজ্ঞা (২৬) নামে এক মেয়ে ও সপ্তক (২৪) নামে এক পুত্র সন্তান রেখে গেছেন। তার দুজনই বর্তমানে অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা করছেন। সজ্ঞার পড়াশোনা প্রায় শেষের দিকে।এন্ড্রু কিশোর রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ম্যানেজমেন্ট বিভাগে পড়াশোনা করেছেন।