আহসান উল্লাহ বাবলুউপজেলা প্রতিনিধি:আশাশুনিতে ঘরের চালে ঢিল ছোড়ার অভিযোগে কওমী মাদ্রাসার এক ছাত্রকে ডেকে নিয়ে আটক করার পর তার শরীরে আলকাতরা মাখানোর অভিযোগে দু’টি বাড়ি, একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও পোল্ট্রি ফার্মে হামলা চালানো হয়েছে। আশাশুনি উপজেলার তেঁতুলিয়া পশ্চিমপাড়ার কোহিনুর বেগম ও তার মেয়ে রোজিনার বাড়িতে তেঁতুলিয়া হামিইউছুনুর কওমি
মাদ্রাসা ও হাফিজাখানার ছাত্র ও স্থানীয় কয়েককটি গ্রামের ৫শতাধিক মানুষ এ সন্ত্রাসী হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট চালায়। ভাংচুর ও লুটপাটে বাধা দেওয়ায় ওই পরিবারের কয়েকজন আহত হয়েছেন।
আহতরা হলেন, তেতুলিয়া পশ্চিমপাড়ার গ্রাম পুলিশ রুহুল আমিনের মেয়ে কোহিনুর বেগম, তার মেয়ে রোজিনা, রোজিনার ছেলে
ইমরান, রুহান, একই পাড়ার মরিয়ম, মোসলেমা, নাছিমা ও রানী, সামছুর রহমান ও রিঙ্কু। এদের মধ্যে কোহিনুরকে আশাঙ্কাজনক অবস্থায় সাতক্ষীরা সদর হাসপাতাল ও অন্যদের স্থানীয়ভাবে চিকিৎসা
দেওয়া হয়েছে। তেঁতুলিয়া বাজারের পশ্চিম পাশে মরিচ্চাপ নদীর চরের বাসিন্দা কোহিনুর বেগম জানান, তেঁতুলিয়া ব্রীজের পাশের বাসিন্দা
রবিউল ইসলাম সরদারের ছেলে নজরুল ইসলাম(১৫) তেঁতুলিয়া
হামিইউছুনুর কওমি মাদ্রাসা ও হাফিজাখানার নজরান বিভাগে
পড়াশুনা করে। শুক্রবার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে নজরুল তাদের বাড়ির পিছনে যেয়ে তার নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। সাড়া না পাওয়ায় ঘরের চালে ইট ছুঁড়ে মারে। একপর্যায়ে ছাদে উঠে মেয়ে রোজিনা বাড়ির পিছনের রাস্তায় নজরুলকে দেখতে পায়। জরুরী দরকার আছে বললে মেইন গেট খুলে দেওয়া হয়। এ সময় সে ঘরের মধ্যে এসে রোজিনার কাছে থাকতে চায়। এতে তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে নজরুলকে আটক করেন। পরে তার হাতে ও মুখে আলকতারা মাখিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। কোহিনুর ইসলাম আরো জানান, মাদ্রাসার ঘাট থেকে নজরুলকে
ডেকে এনে তার উপর অত্যাচার করা হয়েছে বলে মাদ্রাসার ছাত্ররা এলাকায় প্রচার দেয়। মাদ্রাসা বন্ধ থাকার পরও বাড়ি বাড়ি যেয়ে
ছাত্রদের একত্রিত করা হয়। খবর দেওয়া হয় পার্শ্ববর্তী গ্রামেও।
একপর্যায়ে শুক্রবার সকাল ৯টার দিকে একই গ্রামের শহীদুল সরদারের ছেলে মাদক ব্যবসায়ি রুবেল, রবিউলের ছেলে নজরুল, জাহেদ সরদারের ছেলে আরিফুল ও রফিকুল, রফিকুল সরদারের ছেলে রবিউল, কাদের গোলদারের ছেলে আলাউদ্দীন, আশরাফ আলীর ছেলে ইসমাইল, শুকুর ফকিরের ছেলে আব্দুল আজিজ, শাহজালালের ছেলে আব্দুল্লাহ, গোলাম রসুল গোলদারের ছেলে সোলায়মান, আনছার সরদারের ছেলে মোস্তফাসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামের চার থেকে ৫০০ লোক হাতে চাইনিজ কুড়াল, লোহার রড, দা, শাবল, বাঁশের লাঠি ইত্যাদি নিয়ে তাদের বাড়িতে হামলা চালায়। এ সময় তারা বাড়ি সংলগ্ন মুদি দোকানের শার্টার, মেইন গেটের তালা, ভেঙে ভিতরে
ঢুকে পড়ে। একে একে তারা চারটি বসত ঘর, একটি রান্না ঘর ও
বাথরুমের দরজা এবং দোতালার সিড়িঘরের দরজা ভেঙে ফেলে। ঘরের মধ্যে থাকা একটি রেফ্রিজারেটর, দু’টি পানির ট্যাঙ্ক, একটি ৫০ ওয়াটের সোলার পে-ট, একটি বৈদ্যুতিক মিটার, দু’টি ড্রেসিং টেবিল, চারটি শোকেজ, একটি
বেসিন, একটি আলমারিসহ বিভিন্ন জিনিসপত্র, ঘরের চাল, ছাদের অংশ, পোল্ট্রি ফার্ম ভাঙচুর করাসহ তাদের বাড়ি থেকে নগদ টাকা ও সোনার গহনাসহ দু’ লক্ষাধিক টাকার মালামালা লুট করে নিয়ে যায়। ভাংচুর করা হয় তিন লক্ষাধিক টাকার জিনিপত্র। লুটপাট ও ভাংচুরে বাধা দেওয়ায় তাকে (কহিনুর) এলোপাতাড়ি পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করা হয়। তাকে রক্ষায় এগিয়ে এলে রোজিনা তার দু’ ছেলে, মরিয়মসহ বাড়ির সবাইকে জখম হয়।
সরেজমিনে শুক্রবার দুপুরে তেঁতুলিয়া গ্রামের গ্রাম পুলিশ
রুহুল আমিন, রাফিজউদ্দিন, রিঙ্কু, মুজিবর সানা, রফিকুল সানা,
আশরাফুল ইসলাম ও মোসলেম আলী জানান, শুক্রবার সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১১টা পর্যন্ত এ হামলা চলে। খবর পেয়ে আশাশুনি থানার
উপপরিদর্শক জিল্লুর রহমান, জুয়েল, জাহাঙ্গীর, সাঈদসহ একদল পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। সকালের দিকে তারা কওমী মাদ্রাসার ছাত্র, ব্রাহ্মন তেঁতুলিয়া, মিত্র তেঁতুলিয়া, তেঁতুলিয়া, ফকরাবাদ ও মোকামখালি থেকে আসা কয়েক’শ জামায়াত সন্ত্রাসীকে পুলিশ থামানোর চেষ্টা করলে তাদেরকেও ধাওয়া করে সন্ত্রাসীরা। পুলিশ ভাংচুর, লুটপাট ও মারপিটের দৃশ্য মোবাইলে ধারণ করার চেষ্টা করলে বাধা দেয় সন্ত্রাসীরা। একপর্যায়ে দেবহাটা সার্কেলের সহকারি পুলিশ সুপার ইয়াছিন আলী, আশাশুনি থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা গোলাম কবীরের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন পুলিশ ঘটনাস্থলে এলে হামলাকারিরা চলে যায়। পুলিশ আহতদের উদ্ধার করে হাসপাতালে
ভর্তির ব্যবস্থা করে। তারা জানান, ২০১৩ ও ২০১৪ সালের পরবর্তী
জামায়াতের তাণ্ডব তারা শুক্রবার দেখেছেন। এদিকে রবিউল ইসলামের ছেলে নজরুল ইসলাম বলে সে শুক্রবার ভোরে অজু করার জন্য মাদ্রাসার পুকুর ঘাটে যায়। বাড়ি থেকে ডাক দিয়ে ঘরের চালে ঢিল মারার অভিযোগে তাকে কোহিনুর নানী আটকে রেখে সারা গায়ে আলকাতরা মাখিয়ে দেয়। বিষয়টি সে ও তার পরিবারের সদস্যরা ইউপি সদস্য আইয়ুব আলীকে জানান।
একপর্যায়ে খবর ছড়িয়ে পড়লে এ হামলা ও ভাংচুরের ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আইয়ুব আলী জানান, কোহিনুর ও তার মেয়ে
রোজিনার সামাজিক সম্মান নেই। রোজিনা দু’ স্বামীকে তালাক দিয়েছে। দ্বিতীয় স্বামী রমজান হাজীর কাছ থেকে চার লক্ষাধিক টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এলাকার পরিবেশ নষ্ট হওয়ায় অনেকেই তাদেও উপর ক্ষুব্ধ। নজরুলকে ডেকে নিয়ে আটক করে আলকাতরা মাখানোর বিষয়টি তাকে জানানোর পর দফাদার আজিজুল ইসলামসহ দু’জনকে কোহিনুরের বাড়িতে পাঠানো হয়। সেখানে দফাদারকেও অপমান করা হয়। একপর্যায়ে স্থানীয় কয়েকটি গ্রামের কয়েক’শ মানুষ কোহিনুর ও রোজিনার বাড়ি, ব্যবসা
প্রতিষ্টান ও পোল্ট্রি ফার্মে হামলা ও ভাংচুর চালায়। তেঁতুলিয়া হামিইউছুনুর কওমি মাদ্রাসা ও হাফিজাখানা পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মোস্তফা হাজী বলেন, তিনি
বিষয়টি জেনেছেন। তবে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকলে সেটা
আইন প্রয়োগকারি সংস্থার কাছে না জানিয়ে যেভাবে পুলিশের উপস্থিতিতে হামলা, ভাংচুর ও লুটপাট করা হয়েছে সেটা কোনমতে মেনে নেওয়া যা